সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ভুক্তভোগী নাজমুল শেখ। |
রাহিম সরকার, গাজীপুর
কোন অপরাধ না করেও ভুয়া ওয়ারেন্টে ৭ দিন কারাবাস করেছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ভুক্তভোগী মো. নাজমুল শেখকে। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। ১৯ মে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন নাজমুল।
আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী নাজমুল শেখ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশাসনের কাছে তার নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ সময় তার সাথে তার বাবা হাবিজ উদ্দিন শেখ ও ভাই বুলবুল শেখ উপস্থিত ছিলেন।
নাজমুল শেখ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১২ মে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাজীপুর সদরের মনিপুর ভবানীপুর এলাকায় আমার অফিসের (গোল্ডেন হারভেস্ট আইসক্রিম লিমিটেড) মেইন গেট হতে সাদা পোশাক পরিহিত (পুলিশ পরিচয়ে) তিনজন লোক আমাকে আটক করে কালীগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। এসময় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ আমাকে জানায় আমার নামে ওয়ারেন্ট আছে। আমি ওয়ারেন্টের কপি দেখতে চাইলে তারা আমাকে তাদের মোবাইল ফোন থেকে আমার নামীয় একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখান। আমার নামে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানোর মতো কোন ঘটনা নেই বলেও তাদেরকে জানাই। কিন্তু তারা আমাকে কোন প্রকার সহযোগিতা না করে আমার সাথে উল্টো দূর্ব্যবহার করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
পরদিন আমাকে কালীগঞ্জ থানা হতে গাজীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়। ১৪ মে গাজীপুর জেল হাজত থেকে আমাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকায় চালান করে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নং-১ ঢাকা মহানগর সিআর ১৭৮০/১৫ নং মামলার কোন অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে আমাকে বেকুসুর খালাস দিলে আমি ১৯ মে মুক্তিলাভ করি।
তিনি আরো বলেন, এই ভূয়া ওয়ারেন্ট তৈরি ও আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও সমাজে হেয় করার জন্য স্থানীয় মোতাহার হোসেন বাচ্চু (৪৮), আলমগীর শেখ (৪০), আকরাম শেখ (৩৬) এবং আজম শেখ (৩২) জড়িত থাকতে পারেন। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ভিক্টিম তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি এ ব্যাপারে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তার দাবি জানান।
ভিক্টিমের আইনজীবী (বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট) মো. বাবুল মোড়ল জানান, ১৮ মে ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভিক্টিমের জামিন আবেদন করলে আদালত জানান অত্র মামলা ( নং-১৭৮০/২০১৫) এ আদালতে নেই। ওয়ারেন্টের সীল স্বাক্ষরও এ আদালতের নয়। পরে আদালতের বিচারক রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে ঘটনা ও ওয়ারেন্টটি ভুয়া প্রমানিত হওয়ায় ভিক্টিমকে কারাগার থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন। ওয়ারেন্টটিতে ইস্যুকারীর মোবাইল নম্বরও ছিল ১০ ডিজিটের এবং আদালতের নাম লেখা রয়েছে ঢাকা আদালত। এ নামে কোন আদালত নেই বলেও জানান এ আইনজীবী।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন,আদালত থেকে আমাদের কাছে ওয়ারেন্ট কপি এসেছে। তা পেয়ে আমরা তামিল করেছি মাত্র।
এ বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ (বিপিএম সেবা) জানান, ঘটনাটি উদঘাটনে বুধবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনসকে তদন্ত করতে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন: