জাল কাগজপত্র দিয়ে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার হোতা সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম (ইনসেটে বামে) ও দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া (ইনসেটে ডানে)। |
বিশেষ প্রতিনিধি
দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া গাজীপুর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে জাল কাগজপত্র দিয়ে সরকারি খাসজমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার গোবিন্দবাড়ি মৌজার সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ব্যক্তি মালিকানায় দেখিয়ে; জমির নামজারি জমাভাগের জাল সনদ, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের জাল রশিদ, এবং ভুয়া জোতের তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া গাজীপুর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে জাল কাগজপত্র দিয়ে সরকারি খাসজমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার গোবিন্দবাড়ি মৌজার সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি ব্যক্তি মালিকানায় দেখিয়ে; জমির নামজারি জমাভাগের জাল সনদ, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের জাল রশিদ, এবং ভুয়া জোতের তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এ সংক্রান্ত সব ধরনের নথি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
দলিল সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি থানার কোনাবাড়ি গ্রামের মো. জহির উদ্দিনের ছেলে মো. নাজিম উদ্দিনকে দলিল গ্রহীতা বা জমিটির ক্রেতা দেখানো হয়। গাজীপুর জেলার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর থানার এনায়েতপুর গ্রামের মোতালেব মিয়া সিকদারের ছেলে মো. ইব্রাহিম মিয়া সিকদার ও মো. আমজাদ হোসেন সিকদার, মেয়ে লিলি আক্তার ও লাইলী বেগম এবং স্ত্রী জহুরা খাতুনকে দলিল দাতা বা জমিটির বিক্রেতা দেখানো হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির বিতর্কিত সদস্য গাজীপুরের সদর থানার আদাবৈ গ্রামের মো. হালিম ভূঁইয়া (সনদ নম্বর ৪৪৫) অভিযুক্ত দলিলটি সম্পাদনের প্রক্রিয়া করেন।
দলিলে ২৩.৬৮ (তেইশ দশমিক ছয় আট) শতাংশ জমির মূল্য দেখানো হয় ৭৯,০০,০০০.০০ (উনআশি লাখ) টাকা। প্রকৃতপক্ষে, এই জমির বাজার মূল্য আরও অনেক বেশি। এতে দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া ও সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ক্ষতি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জমি রেজিস্ট্রির নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে গত ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণে যা বর্ণনা করা হয়েছে তার সবই কাল্পনিক, মনগড়া ও মিথ্যা। কারণ সরকারি নথিতে এসএ ও আরএস রেকর্ডে জমিটি ‘খাস’ হিসেবে উল্লেখ আছে।
অল্প সময়ে কাজ সারতে দলিল লেখক মো. হালিম ভূঁইয়া তার আপন ছোট ভাই মো. হারুন অর রশিদকে অভিযুক্ত দলিলে স্বাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছেন।
এছাড়া, অভিযুক্ত দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থক হিসেবে দেওয়া নামজারি ও জমাভাগের সহকারী কমিশনার (ভূমি), টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল, গাজীপুরের ৩৪৫/২০১৯-২০২০ নম্বর নথিটি অন্য জমির ও অন্য মালিকের; সুতরাং তা জাল।
কাশিমপুর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত থাকায় কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটির ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা নেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থক হিসেবে দেওয়া ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের রশিদটিও জাল।
এছাড়াও, অভিযুক্ত দলিলে একটি জোত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে কাশিমপুর ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গোবিন্দবাড়ি মৌজার ওই নম্বরের জোতে অন্য ব্যক্তির নাম রয়েছে; উল্লিখিত বিক্রেতাদের নাম সেখানে নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, অভিযুক্ত দলিল লেখক মো. হালিম বলেন, “আমি দলিল লিখে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে উপস্থাপন করি। সাব-রেজিস্ট্রার উপযুক্ত মনে করলে রেজিস্ট্রি করে দেয়।”
নিবন্ধন অধিদপ্তরের নিবন্ধন ম্যানুয়াল, ২০১৪ প্রকাশিত বিক্রয় দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি অনুযায়ী হস্তান্তরিত সম্পত্তির স্বত্ব এবং গত ২৫ বছরের হস্তান্তরের তথ্য যাচাই করার দায়িত্ব যথাক্রমে ক্রেতা, তল্লাশকারী, আইনজীবী; বা দলিল লেখকের। |
এ ব্যাপারে জানতে গত ০৩ জুন, ২০২৪ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমের অফিসে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে বলেন, ‘এখন কেন এসেছেন?’। জাল কাগজপত্র দিয়ে জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্তভাবে বলেন, ‘কাগজপত্র যাচাই করার দায়িত্ব আমার না। কে জাল কাগজপত্র দিল, কে ভুয়া কাগজ দিল, তা দেখার সময় আমার নাই। যে দিছে তাকে গিয়ে ধরেন। আমাকে কেন?’।
নিবন্ধন অধিদপ্তরের নিবন্ধন ম্যানুয়াল, ২০১৪ প্রকাশিত বিক্রয় দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রির সমর্থনে দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই করার দায়িত্ব সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল সম্পাদনকারীর হলেও তারা অবৈধভারে লাভবান হয়ে জাল কাগজপত্র দিয়ে অভিযুক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি করেছেন। |
দীর্ঘদিন
ধরেই গাজীপুর জেলার বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রাররা
যোগসাজশ করে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে সরকারি জমি ব্যক্তিমালিকানায় রেজিস্ট্রি
করে আসছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য বেড়িয়ে আসছে। যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জাল কাগজপত্র দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদন চক্রের অন্যতম হোতা গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির বিতর্কিত সদস্য মো. হালিম ভূঁইয়া আরও কয়েকজন দলিল লেখক মিলে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলিল সম্পাদন করে থাকেন।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখকদের নেতা ও তাদের দালালরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে অদৃশ্য ক্ষমতা আর অবৈধ কর্মকাণ্ডের বলয় তৈরি করে রেখেছেন। যাদের কাছে আমরা সাধারণ জনগণ এমনকি ক্ষেত্রমতে সরকারও জিম্মি। তদন্ত করে এদেরকে দ্রুতই দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’
এর আগে, গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে আসা জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের নানামুখী হয়রানি করা এবং ঘুষ নেওয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী বেগম রিনা পারভীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুটি মামলা করেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জাল কাগজপত্র দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদন চক্রের অন্যতম হোতা গাজীপুর সদর দলিল লেখক ও ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির বিতর্কিত সদস্য মো. হালিম ভূঁইয়া আরও কয়েকজন দলিল লেখক মিলে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলিল সম্পাদন করে থাকেন।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখকদের নেতা ও তাদের দালালরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে অদৃশ্য ক্ষমতা আর অবৈধ কর্মকাণ্ডের বলয় তৈরি করে রেখেছেন। যাদের কাছে আমরা সাধারণ জনগণ এমনকি ক্ষেত্রমতে সরকারও জিম্মি। তদন্ত করে এদেরকে দ্রুতই দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’
এর আগে, গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে আসা জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের নানামুখী হয়রানি করা এবং ঘুষ নেওয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন সাব-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী বেগম রিনা পারভীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুটি মামলা করেছে।
মন্তব্য করুন: