ভ্যানে মরদেহ ওঠানো ব্যক্তি ও লাল বৃত্তবন্দি ব্যক্তি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত |
এনএনবি, আশুলিয়া (ঢাকা)
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে শেখ হাসিনার পলায়নের পর ছাত্র-জনতার জয় এলেও এই দিনটিতেও লাশের মিছিলে যোগ হয়েছে নতুন শহীদদের নাম।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যরা সেইসব গুলিবিদ্ধ শহীদের লাশ ভ্যানে তুলে একটি ময়লা চাদর ও রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যানার দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।
ভিডিওটিতে যেসব পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে তাদের মধ্যে একজনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্য হলেন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন।
আরাফাত হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে লেখাপড়া শেষ করে ২০২২ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে বলে স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।
আরাফাত হোসেনের পিতা আরিফ হোসেন ওই ওয়ার্ডের বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আরাফাত হোসেন ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ভিডিওতে থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, গত শনিবার (৩১ আগস্ট, ২০২৪) বিকেলে প্রত্যক্ষদর্শী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ দুইজনের স্বজনরা আশুলিয়া থানার সামনে ভ্যানে থাকা লাশগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল বলে দাবি করেন।
আশুলিয়ার জামগড়া শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদ আস-সাবুর (১৬) ৫ আগস্ট নিখোঁজ হন বলে জানান মা রাহেলা জান্নাত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে অনেক গোলাগুলি হয়। সেখানে অনেকেই মারা গেছে। আমার ছেলে ৫ আগস্ট নিখোঁজ ছিল। পরে ৬ আগস্ট সকালে আশুলিয়া থানার একটি পুলিশের পিকআপে কয়েকজনের মরদেহ পাওয়ার খবর পেয়ে আশুলিয়া থানায় যাই। তখন দেখি ওই গাড়িতে কয়েকটি আগুনে পুড়া লাশ। তখন আস-সাবুরের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের সিম থেকে মরদেহ শনাক্ত করি। আমার ধারণা, ভ্যানে থাকা লাশগুলোই গুম করার জন্য আগুন দেয়া হয়েছিল।’
অন্যদিকে শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘৫ আগস্ট আমার ছেলেকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পরে ৬ আগস্ট সকালে আশুলিয়া থানায় এসে দেখি পুলিশের গাড়িতে লাশ। তখন আমার ছেলের আইডি কার্ড দেখে নিশ্চিত হই আমার ছেলে সজল। নিশ্চিহ্ন করার জন্য হত্যার পরে আগুন দিয়েছিল মরদেহগুলোতে।’
সেখানে আরও ছয়টি লাশ ছিল বলে দাবি করেন শাহিনা বেগম।
বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্ট গোলাগুলির কারণে মসজিদে নামাজ পড়তে পারিনি। সন্ধ্যার পর কিছুটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাহিরে গিয়ে দেখি আশুলিয়া থানায় পুলিশের গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। পরে আন্দোলনকারীরা এশার নামাজের সময় আশুলিয়া থানার সামনে নিহতদের জানাজার উদ্যোগ নেন। তখন আমি ওই গাড়িতেই তাদের প্রথম জানাজা পড়ি। এ সময় পুলিশের ওই গাড়িতে আটটির মতো মরদেহ ছিল।’
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওটি পর্যালোচনা চলছে। ঘটনাটির তদন্তে কাজ শুরু করা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন: