হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে দিল্লিতে ভিএইচপি-র বাংলাদেশ-বিরোধী বিক্ষোভ। অগাস্ট ১৯৮২ |
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারতে বাংলাদেশিদের নিয়ে একসময় শ্রদ্ধাশীল মনোভাব থাকলেও, বর্তমানে তাদের নিয়ে বিতর্কিত ও নেতিবাচক আলোচনাই রাজনীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশক থেকে ‘বাংলাদেশি’দের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কিন্তু কীভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হল? এবং কেন বাংলাদেশি মানে আজ ‘মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’? এই প্রতিবেদন আপনাকে ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ইতিহাসের গভীরে নিয়ে যাবে, যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তনের চিত্র পাওয়া যায়।
ভারতে বাংলাদেশিদের নিয়ে আলোচনার মূল শুরু ১৯৯০-এর দশক থেকে। এর আগে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত আসামে যে বাঙালি-বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, তা সীমিত ছিল মূলত আসামের ভেতরে। তবে ১৯৯৫ সালে শিবসেনা ও বিজেপির মহারাষ্ট্র জোট সরকারের ক্ষমতায় আসার পর মুম্বাইতে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ অভিযান শুরু হয়।
তৎকালীন শিবসেনা সুপ্রিমো বালাসাহেব ঠাকরের নেতৃত্বে শহরের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে শুরু হয় এক নিষ্ঠুর অভিযান। নাগরিকত্ব যাচাই ছাড়াই মুসলিম বাংলাদেশিদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দেওয়া হত। অথচ আসল নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ না দিয়েই এই হেনস্থার শিকার হতেন অনেক পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মুসলিমরা।
শুধু মুম্বাই নয়, রাজধানী দিল্লিতেও বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় এই অভিযান। দলীয় প্রচারণার মাধ্যমে প্রচারিত হয় যে বাংলাদেশি মুসলিমরা দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলছে। রাজনীতিকরা এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট ব্যাংক মজবুত করার চেষ্টা করেন।
১৯৯৮ সালে আসামের তৎকালীন রাজ্যপাল এস কে সিনহার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা শুধু আসামের জনসত্তার জন্য নয়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
ভারতে বাংলাদেশিদের নিয়ে একসময় শ্রদ্ধাশীল মনোভাব থাকলেও, বর্তমানে তাদের নিয়ে বিতর্কিত ও নেতিবাচক আলোচনাই রাজনীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশক থেকে ‘বাংলাদেশি’দের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কিন্তু কীভাবে এ পরিস্থিতি তৈরি হল? এবং কেন বাংলাদেশি মানে আজ ‘মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’? এই প্রতিবেদন আপনাকে ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ইতিহাসের গভীরে নিয়ে যাবে, যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তনের চিত্র পাওয়া যায়।
ভারতে বাংলাদেশিদের নিয়ে আলোচনার মূল শুরু ১৯৯০-এর দশক থেকে। এর আগে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত আসামে যে বাঙালি-বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, তা সীমিত ছিল মূলত আসামের ভেতরে। তবে ১৯৯৫ সালে শিবসেনা ও বিজেপির মহারাষ্ট্র জোট সরকারের ক্ষমতায় আসার পর মুম্বাইতে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ অভিযান শুরু হয়।
তৎকালীন শিবসেনা সুপ্রিমো বালাসাহেব ঠাকরের নেতৃত্বে শহরের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে শুরু হয় এক নিষ্ঠুর অভিযান। নাগরিকত্ব যাচাই ছাড়াই মুসলিম বাংলাদেশিদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দেওয়া হত। অথচ আসল নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ না দিয়েই এই হেনস্থার শিকার হতেন অনেক পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মুসলিমরা।
শুধু মুম্বাই নয়, রাজধানী দিল্লিতেও বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় এই অভিযান। দলীয় প্রচারণার মাধ্যমে প্রচারিত হয় যে বাংলাদেশি মুসলিমরা দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলছে। রাজনীতিকরা এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট ব্যাংক মজবুত করার চেষ্টা করেন।
‘শরণার্থী’ থেকে ‘অনুপ্রবেশকারী’: বাংলাদেশিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। তবে সামরিক শাসন, বিশেষত জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মের ভূমিকা বেড়ে যায়, যা ভারতীয়দের মধ্যে বাংলাদেশিদের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন ঘটায়। এর সাথে যুক্ত হয় বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারণা, যা মুসলিম বাংলাদেশিদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে ভোট ব্যাংককে মজবুত করার কৌশলে রূপ নেয়।‘বাংলাদেশি’ মানে ‘মুসলিম’: ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব
বাংলাদেশি বলতে শুধুমাত্র মুসলিমদের বুঝানো শুরু হয় ভারতীয় রাজনীতিতে। আরএসএস ও বিজেপির মতে, মুসলিমরা ‘ভালো কাজ করতে পারে না’, এবং এ ধারণাকেই প্রচারের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম বাংলাদেশিদের ভারতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়।১৯৯৮ সালে আসামের তৎকালীন রাজ্যপাল এস কে সিনহার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা শুধু আসামের জনসত্তার জন্য নয়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
বিজেপির কৌশল: রাজনীতির তাস হিসেবে বাংলাদেশিরা
ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিজেপি এই ইস্যুটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে। যদিও বিজেপি দাবী করে তারা সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্মান করে, তবে বাস্তবে বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে।‘বাংলাদেশি’ ইস্যু: রাজনৈতিক গিমিক নাকি বাস্তব সমস্যা?
অনেকের মতে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যু ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা লোটার একটি কৌশল। তৃণমূলের সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেব বলেন, ভারত কখনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ সমস্যা সমাধানে আন্তরিক চেষ্টা করেনি। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই ভোটের আগে এই ইস্যু জাগিয়ে তোলে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না।সূত্র: বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন: