রাহিম সরকার, গাজীপুর
জনদুর্ভোগের শীর্ষে গাজীপুর শহরের একমাত্র রেলক্রসিংটি এখন এলাকাবাসির গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন এলাকাবাসি। শহরের মধ্যখানে থাকা এই রেলক্রসিংটি পার হয়ে যেতে হয় গাজীপুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালতে। বাংলাদেশ রেলওয়ের এই রুটে নিয়মিত ৩৩জোড়া ট্রেন চলাচল এবং ইঞ্জিন জোড়া দেওয়ার সময় রেলক্রসিং তথা সড়ক বন্ধ থাকায় শহরে প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘণ্টার অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়।
জয়দেবপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, “ক্রসিংয়ের অদূরেই রয়েছে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন। ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেন এই পথ দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এ পথে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ৬৬টি ট্রেন। এছাড়াও ইঞ্জিন বদল করতে গিয়ে মোট ১০০ বারের মতো লেভেল ক্রসিংয়ের গেইট বন্ধ করতে হয়। গড়ে ৫ মিনিট করে ধরলে প্রতিদিন লেভেল ক্রসিংটি ৮ঘন্টা বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিটি ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই দু’পাশের পথ আটকে দিতে হয়। ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়। ক্রসিংয়ের উপর ওভারপাস করে দিলে এই সমস্যার সমাধান হবে। “
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, “গাজীপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ পথে ট্রেন যাতায়াতের কারণে রেলক্রসিং বন্ধ থাকায় দিনের অনেক সময়ই যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ওই পথে চলতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। যথাসময়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যায় না। এতে আগুন বড় হয়ে যায় কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। পথেই তারা মারা যায়। যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারলে এলাকাবাসি ক্ষিপ্ত হয়। আমরাও আক্রান্ত হই। এসব সমস্যার লাঘব করতে হলে রেলক্রসিং এলাকায় ফ্লাইওভার ব্রীজ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।”
গাজীপুর সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের থানাটি রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ক্রসিংয়ের পূর্বপাশের কোন আসামি ধরতে গিয়ে ওই রেলক্রসিংয়ে যানজটের পড়ে আমাদের কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। অবর্ণনীয় কষ্ট হয়। অনেক সময় ঘটনাস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় আসামি ধরতে ব্যর্থ হই। মারামারির ঘটনায় ওই এলাকা পার হয়ে আহত ভিক্টিমকেও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়না। তাই খুব জরুরী ভিত্তিতে এখানে ফ্লাইওভার ব্রীজ নির্মাণ করা জরুরী।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ সাহেদুর রহমান ইমন বলেন, “রেলক্রসিংয়ে গেইটবার ফেলার পর শুরু হয় ট্রেন আসার অপেক্ষা। এতে দীর্ঘ জনজট ও যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতিবার অন্তত ১০/১২ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। ফলে ক্রসিংয়ের দু’পাশে আটকে পড়া মানুষদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। ট্রেন আসার সময় গুরুতর রোগীদের নিয়ে বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তার স্বজনদের। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী চিকিৎসা নিতে না পেরে পথেই মারা যায়। নগরীতে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আটকে থাকতে দেখা গেছে এই রেলক্রসিংয়ে। ততক্ষণে আগুনেও পুড়ে সব শেষ হয়ে যায়। তাই এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা জরুরি।”
গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, “গাজীপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত এ ক্রসিংয়ের একপাশে রয়েছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা গণপূর্ত, পাসপোর্ট অফিস, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ। অন্যপাশে রয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, জেলা কারাগার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা। এ ক্রসিং পার হয়েই এলাকাবাসিকে তাদের অফিস ও অন্যান্য গন্তব্যে যেতে হয়। ট্রেন পার হতে পাঁচ মিনিট লাগলেও কয়েক মিনিট আগে ক্রসিংটি বন্ধ করে দেওয়ায় সৃষ্ট যানজট শেষ হতে লাগে আরও কমপক্ষে ১০ মিনিট। প্রতিদিন ওই লেভেল ক্রসিংটি বন্ধ থাকে আট ঘন্টারও বেশি সময়।”
১৯৮৬ সালে গাজীপুর পৌরসভা গঠন হয়, আর গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয় ২০১৩ সালে। স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখানকার যানজট সমস্যা সমাধানে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্বাধীন বাংলাদেশের এ রেলক্রসিংয়ে ৫০ বছরেও ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এমতাবস্থায় এ রেলক্রসিংটি এখন গাজীপুরবাসির জন্য যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর দ্রুত নিরসন হওয়া দরকার।
৩৩ জোড়া ট্রেন চলতে প্রতিদিন রেলক্রসিং ও সড়ক বন্ধ ৮ ঘন্টা | ৫০ বছরেও পূরণ হয়নি ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি
জয়দেবপুর রেলক্রসিং |
ভিডিয়োঃ
মন্তব্য করুন: