বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের 'ন্যায্য মূল্য' দিচ্ছেন না বিদেশি ক্রেতারা

অনলাইন ডেস্ক

বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছেন না। পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে এতথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এই অভিযোগ তুলল।

এতে বলা হয়, সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা (১১৩ ডলার) করলেও বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি পুষিয়ে নিতে এই মজুরি যথেষ্ট নয়। পাঁচ বছর আগে পোশাক খাতের মজুরি বাড়ানো হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের ঘর থেকে ৯ শতাংশে উঠেছে।

২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে কিছুদিন আগে রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশে শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে চার শ্রমিক নিহত হন। এই অচলাবস্থার জন্য পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে দায়ী করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।

তাঁকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানাগুলোতে তৈরি পোশাকের বেশি দাম না পেলে শ্রমিকদের বেশি মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়। তারা (বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো) বাংলাদেশ থেকে ন্যায্য দামে পণ্য কিনছে না।

পোশাকের দাম না বাড়ালে এর চেয়ে মজুরি আর বাড়ানো সম্ভব নয় দাবি করে ফারুক হাসান বলেন, ‘ঋণের সুদ বেড়ে গেছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আর এখন বাড়ল মজুরি। আমাদের যেহেতু কারখানা চালু রাখত হবে, তাই আমরা যে দামে পোশাক বিক্রি করছি, তাতে কেবল উৎপাদন খরচটাই উঠে আসছে। এর বড় সুবিধাটা নিচ্ছে ক্রেতারা।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অস্থিরতায় বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাব ফুটে উঠেছে। তার পরও উন্নত বিশ্বের ভোক্তারা যে কম দামে পোশাক পাচ্ছে, তার জন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলো অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো এইচঅ্যান্ডএম ও জারার মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স ও ওয়ালমার্ট। বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানির গন্তব্য এ দুই প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।

বিশ্বের তৈরি পোশাকশিল্পে চীনের পরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই খাত আরও বিকশিত হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি, তুলা, কাঁচামালসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানির ব্যয়ে এই খাত সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। মূল্যস্ফীতি প্রায় দুই অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছে। এর ফলে সরকার বাধ্য হয়েই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে।
 
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতে কাজ করা ৪০ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই নেমে গেছে। যদিও ২০১৮ সালের পর প্রতিবছর শ্রমিকদের মজুরি ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির হিসাব করলে শ্রমিকেরা আগের চেয়ে অনেক কম অর্থ উপার্জন করছেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, ‘উচ্চ বাজারদর ও মূল্যস্ফীতির বর্তমান বাস্তবতায় শ্রমিকদের পক্ষে এই মজুরিতে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাদের সংগঠন ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

তাসলিমা বলেন, ‘শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে দোষারোপ করা অর্ধসত্য। আমরা পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর দায় উপেক্ষা করতে পারি না। কিন্তু মূল দায় তো বাংলাদেশি মালিকপক্ষ ও সরকারের।’

সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধিকে ‘বাস্তবসম্মত’ দাবি করে গার্মেন্টস কারখানার মালিক ও বিজিএমইএর সহসভাপতি মিরন আলী বলেন, কারখানার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই মজুরি বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য শর্ত বা পরিস্থিতি বহাল থাকায় এই সময়ে আরও মজুরি বাড়ানো এক কথায় অসম্ভব।’

সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধির ফলে যে ব্যয় বাড়বে তা পুষিয়ে নিতে আগামী ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাড়তি দাম দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এরই মধ্যে মার্কিন তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।  

এর মধ্যেই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিটেক্স ও এইচঅ্যান্ডএম। এর মধ্যে প্রথম দুই প্রতিষ্ঠান বলেছে, মজুরি বাড়ানোর ফলে পোশাকের দাম সমন্বয় করবে। তবে ওয়ালমার্ট কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ক্রেতাদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার (এএএফএ) জানিয়েছিল, বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার ফলে ৫-৬ শতাংশ বাড়তি উৎপাদন ব্যয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে। এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপসহ বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড এই সংগঠনের সদস্য।

পোশাক শিল্পমালিকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধির ফলে তাঁদের উৎপাদন ব্যয় অন্তত ৫ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যাবে। এর ফলে তাঁদের মুনাফার পরিমাণ কমবে। কারণ, মোট ব্যয়ের প্রায় ১০ থেকে ১৩ শতাংশই মজুরি খাতে যায়। এই বাড়তি ৫ থেকে ৬ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সংগঠনটি।

এএএফএর প্রধান নির্বাহী লামার বলেন, ‘মজুরি বাড়ানোর জন্য দায়িত্বশীল ক্রয় পদ্ধতি নিশ্চিতে আমরা যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা আমরা ও আমাদের সদস্যরা আগেও একাধিকবার বলেছি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য প্রতিবছর ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার আহ্বান আমরা বরাবরই জানিয়ে আসছি।’

মন্তব্য করুন:






Developed by Julius Choudhury
নাম

অভিবাসন,2,অর্থ ও বাণিজ্য,12,আইন ও অপরাধ,3,আন্তর্জাতিক,29,ইটালি,1,ইতালি,1,কক্সবাজার,1,কুড়িগ্রাম,1,খাদ্য,4,খেলা,4,গণমাধ্যম,5,গাজীপুর,346,গোপালগঞ্জ,1,জীবনধারা,7,ঢাকা,1,দরকারি তথ্য,5,দিনাজপুর,1,নরসিংদী,2,নিউইয়র্ক,5,নিউজিল্যান্ড,1,পরিবেশ,1,প্রযুক্তি,10,ফিনল্যান্ড,1,বাংলাদেশ,56,বিচিত্র,6,বিজ্ঞান,1,বিনোদন,2,বিশেষ সংবাদ,8,ব্যাংকিং,1,ভারত,3,মানিকগঞ্জ,1,মালয়েশিয়া,1,যুক্তরাজ্যে,1,যুক্তরাষ্ট্র,8,লিবিয়া,1,শিক্ষা,1,সংযুক্ত আরব আমিরাত,1,সিরাজগঞ্জ,1,সৌদি আরব,1,স্পেন,1,স্বাস্থ্য,15,
ltr
item
ডেইলি নিউজ | বিশ্বজুড়ে বাংলা সংবাদ, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ: বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের 'ন্যায্য মূল্য' দিচ্ছেন না বিদেশি ক্রেতারা
বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের 'ন্যায্য মূল্য' দিচ্ছেন না বিদেশি ক্রেতারা
বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTGCQHSC1EoT_kwTX4pjWzstDj_-HLvNzWsxVrNpNndO2Fd1SqSO7ERdhZVeq7l0IMPROozIW_wwsCDOE24bYr9XBQNJgATrmVkLnGPZ4Aki4AattxqirHgY4i1m9gPGIDcatIITwNa0jqFnyZS3WQe_QILaaBNsQkKQ5hz212WxnIanYMXiRVQksHubs/s16000/gazipur-news.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTGCQHSC1EoT_kwTX4pjWzstDj_-HLvNzWsxVrNpNndO2Fd1SqSO7ERdhZVeq7l0IMPROozIW_wwsCDOE24bYr9XBQNJgATrmVkLnGPZ4Aki4AattxqirHgY4i1m9gPGIDcatIITwNa0jqFnyZS3WQe_QILaaBNsQkKQ5hz212WxnIanYMXiRVQksHubs/s72-c/gazipur-news.jpg
ডেইলি নিউজ | বিশ্বজুড়ে বাংলা সংবাদ, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ
https://bn.dailynewsview.com/2023/11/0123111801.html
https://bn.dailynewsview.com/
https://bn.dailynewsview.com/
https://bn.dailynewsview.com/2023/11/0123111801.html
true
8535116959523749911
UTF-8
সমস্ত পোস্ট লোড হয়েছে কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি সব দেখুন বিস্তারিত জবাব জবাব বাতিল ডিলিট লেখা: হোম পৃষ্ঠা পোস্ট সব দেখুন আপনার জন্য সুপারিশকৃত লেবেল আর্কাইভ খোঁজ সব পোস্ট আপনার অনুরোধের সাথে কোনো পোস্টের মিল পাওয়া যায়নি প্রচ্ছদে ফিরে যান Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec এইমাত্র 1 মিনিট আগে $$1$$ মিনিট আগে 1 ঘন্টা আগে $$1$$ hours ago গতকাল $$1$$ দিন আগে $$1$$ সপ্তাহ আগে 5 সপ্তাহেরও বেশি আগে অনুসারী অনুসরণ করুন THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content