প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রেমিককে হত্যা, প্রেমিকা গ্রেপ্তার

অভিযুক্ত প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীমকে (২০) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।


করেসপন্ডেন্ট, নরসিংদী

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রেমিক মো. মাঈনুল মীরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীম।  এই ঘটনায় মামলা হলে পলাশ থানার পুলিশ অভিযুক্ত ইসরাত জাহান মীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভালোবেসেই শ্রাবন্তী আক্তারকে (২০) বিয়ে করেন মো. মাঈনুল মীর (২৩)। দুজনের পরিবার রাজি না থাকায় গোপনে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করেন তাঁরা। কিন্তু কে জানত, বিয়ের মাত্র ৬ দিনের মাথায় পুরোনো প্রেমিকার হাতেই জীবন দিতে হবে মাইনুলকে। অন্য মেয়েকে বিয়ের কথা জানতে পেরে মাঈনুল মীরকে হত্যা করেন পুরোনো প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীম (২০)।


নিহত প্রেমিক মো. মাঈনুল মীর (২৩)।

 

নিহত মাঈনুল মীর নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ফেলু মীরের ছেলে। তিনি স্থানীয় এক দন্ত চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীম উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের খিলপাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের মেয়ে। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। মাঈনুল ও মীমের কর্মস্থলের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার।

গতকাল শনিবার রাতে মীমকে আটক করে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, মীমই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত মীমের বরাত দিয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, মীম ও মাইনুল স্কুল জীবন থেকেই একে অপরের পরিচিত। দুজন স্থানীয় মুসা বিন হাকিম কলেজে একসঙ্গে পড়তেন। এক সময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পর ওই সম্পর্কে ফাটল ধরে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে মীম আরেক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেন। তিন মাস পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার মাইনুলের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগে মীমের। কিন্তু এরই মাঝে শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন মাইনুল। গোপনে একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালাতে থাকেন মাইনুল।

দুজনই পরিবারকে না জানিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন মাইনুল। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস করতে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীর বাবা ও ফুপাসহ অন্য স্বজনেরা মেয়ের জামাইয়ের বাসায় হাজির হন। তাঁরা মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। তবে কোনোভাবেই মেয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে যেতে রাজি হননি। মেয়েকে ছাড়াই বাসায় ফিরে যান তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন মাঈনুল। রাতে বাড়িতে ফিরে না আসায় স্ত্রী ও স্বজনেরা কল করে মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে তাঁরা। কিন্তু মাঈনুলের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় স্থানীয় কমিশনারকে বিষয়টি অবগত করেন তাঁরা। কমিশনার ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করতে পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার সকালে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়।

মাইনুলের স্ত্রী পুলিশের কাছে তাঁর সন্দেহের কথা জানিয়ে বলেন, পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করায় বাবা ও ফুপা তার স্বামীর ক্ষতি করতে পারেন। এরপর পুলিশ নানামুখী তদন্ত শুরু করে। মীরের কর্মস্থলেও খোঁজ নেয়। তবে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় ক্লিনিকের ভেতরে কেউ থাকতে পারেন এমন কোনো সন্দেহ পুলিশের ছিল না। কার কার সঙ্গে মাঈনুলের যোগাযোগ ছিল স্থানীয় ও স্বজনদের কাছ থেকে সেই তথ্য নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এরপর জানা যায়, একই এলাকার তরুণী মীমের সঙ্গে মীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল মাঈনুলের। তখন ওই মেয়ের বাড়িতে যায় পুলিশ। তবে মাইনুলের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই দাবি করেন মীম। যদিও প্রযুক্তিগত তদন্তে মাইনুলের সঙ্গে মীমের একাধিকবার কথা বলার তথ্য পায় পুলিশ।

তবে ঘটনার মোড় নেয় গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার পর। মাঈনুলের ডেন্টাল চিকিৎসক ডা. শিহাবুল হক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালা খোলার পর অভ্যর্থনা কক্ষে মাইনুলকে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনি দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এরপরই সন্দেহভাজন মীমকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে মীম সব স্বীকার করেন।

পুলিশকে মীম জানান, মাঈনুলের বিয়ে করার কথা জানতে পেরেই চেতনানাশক ইনজেকশন কেনেন মীম। কৌশলে মাঈনুলকে তাঁর কর্মস্থলে ডেকে নেন। কেন তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা হলো না, সেটা জানতে চান। একপর্যায়ে মাঈনুল ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করেন মীম। দু-তিন মিনিটের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন মাইনুল। এরপর ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে মাইনুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান মীম।

মীমের বর্ণনা অনুযায়ী, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করায় চেতনানাশক ইনজেকশন ও তা দ্রুত পুশ করার ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে হত্যা মিশন শেষ করেন। এরপর ছুরি, মোবাইল ও সিরিঞ্জ ঘোড়াশাল এলাকার নিকটবর্তী শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ আরও জানান, নিহত মাইনুল হক মীরের সঙ্গে সাবেক প্রেমিকা ইসরাত জাহান মীমের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁরা ঘোড়াশাল বাজার এলাকার মাঈনুলের কর্মস্থলে মিলিত হতেন। সেখানে সপ্তাহে দুদিন দাঁতের চিকিৎসক বসতেন। বাকি পাঁচ দিন রোগীর সিরিয়াল নিতেন মাঈনুল মীর।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই সাইদুর মীর বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ইসরাত জাহান মীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন:






Developed by Julius Choudhury
নাম

অভিবাসন,2,অর্থ ও বাণিজ্য,12,আইন ও অপরাধ,3,আন্তর্জাতিক,29,ইটালি,1,ইতালি,1,কক্সবাজার,1,কুড়িগ্রাম,1,খাদ্য,4,খেলা,4,গণমাধ্যম,5,গাজীপুর,346,গোপালগঞ্জ,1,জীবনধারা,7,ঢাকা,1,দরকারি তথ্য,5,দিনাজপুর,1,নরসিংদী,2,নিউইয়র্ক,5,নিউজিল্যান্ড,1,পরিবেশ,1,প্রযুক্তি,10,ফিনল্যান্ড,1,বাংলাদেশ,56,বিচিত্র,6,বিজ্ঞান,1,বিনোদন,2,বিশেষ সংবাদ,8,ব্যাংকিং,1,ভারত,3,মানিকগঞ্জ,1,মালয়েশিয়া,1,যুক্তরাজ্যে,1,যুক্তরাষ্ট্র,8,লিবিয়া,1,শিক্ষা,1,সংযুক্ত আরব আমিরাত,1,সিরাজগঞ্জ,1,সৌদি আরব,1,স্পেন,1,স্বাস্থ্য,15,
ltr
item
ডেইলি নিউজ | বিশ্বজুড়ে বাংলা সংবাদ, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ: প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রেমিককে হত্যা, প্রেমিকা গ্রেপ্তার
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রেমিককে হত্যা, প্রেমিকা গ্রেপ্তার
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাবেক প্রেমিক মো. মাঈনুল মীরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন প্রেমিকা ইশরাত জাহান মীম।
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgR_d6470xJx2cgwMNJrEk-FF7tT-qYqdrUI2nRjyLl9IMVcfAe12iD7sTlkPMmcJ47fzeR1ZPaaRf24rNFrxOkaS0ba5075BvZCdYWDWoCprIg70haii74WslB8vA3ajmzukyLDsYXf5o8Gb2IsOryl_iqtJRAQlK9p6-XYPZUdeuGHjA8bhVfY-9y=s16000
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEgR_d6470xJx2cgwMNJrEk-FF7tT-qYqdrUI2nRjyLl9IMVcfAe12iD7sTlkPMmcJ47fzeR1ZPaaRf24rNFrxOkaS0ba5075BvZCdYWDWoCprIg70haii74WslB8vA3ajmzukyLDsYXf5o8Gb2IsOryl_iqtJRAQlK9p6-XYPZUdeuGHjA8bhVfY-9y=s72-c
ডেইলি নিউজ | বিশ্বজুড়ে বাংলা সংবাদ, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ
https://bn.dailynewsview.com/2022/02/143.html
https://bn.dailynewsview.com/
https://bn.dailynewsview.com/
https://bn.dailynewsview.com/2022/02/143.html
true
8535116959523749911
UTF-8
সমস্ত পোস্ট লোড হয়েছে কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি সব দেখুন বিস্তারিত জবাব জবাব বাতিল ডিলিট লেখা: হোম পৃষ্ঠা পোস্ট সব দেখুন আপনার জন্য সুপারিশকৃত লেবেল আর্কাইভ খোঁজ সব পোস্ট আপনার অনুরোধের সাথে কোনো পোস্টের মিল পাওয়া যায়নি প্রচ্ছদে ফিরে যান Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec এইমাত্র 1 মিনিট আগে $$1$$ মিনিট আগে 1 ঘন্টা আগে $$1$$ hours ago গতকাল $$1$$ দিন আগে $$1$$ সপ্তাহ আগে 5 সপ্তাহেরও বেশি আগে অনুসারী অনুসরণ করুন THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content