সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল |
ডেইলি নিউজ ডেস্ক
‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
বিশ্বে কম খরচে ব্যতিক্রমী নকশায় নির্মিত ভবন ও ভবনের স্থপতিকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা)। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
নূন্যতম সম্পদের সাহায্যে নির্মিত পরিবেশবান্ধব এই ভবনটি স্থপতি ডেভিড চিপারফিল্ড নির্মিত বার্লিনের একটি গ্যালারি এবং ডেনমার্কে উইলকিনসন আইরি নির্মিত ফুটব্রিজকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে এ পুরস্কার জিতেছে।
ছোট ছোট ইটের তৈরি ৮০ শয্যার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, যিনি এর আগে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা ভবনটি নির্মাণ করেছে।
রিবা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অসাধারণ নকশা ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে কাশেফ চৌধুরী ও আরবানার নকশা করা বাংলাদেশের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটিকে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে।
গার্ডিয়ান বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েই চলেছে। আর এ কারণে আশপাশের শস্যক্ষেতগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় সেগুলো চিংড়ির ঘেরে রূপান্তরিত হয়েছে। আর ভূপৃষ্ঠ পানীয় এতো লবণাক্ত হয়ে উঠেছে যে পান করাসহ বেশিরভাগ কাজেই সেটি ব্যবহার করা যায় না।
আর তাই বর্ষাকালে বিশুদ্ধ পানির সর্বশেষ ফোঁটাটিও সংরক্ষণের চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। আর এ বিষয়ের দিকে নজর দিয়েই কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এমন একটি ভবনের নকশা করেন যেটি আসলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মেশিনে পরিণত হবে। হাসপাতালের প্রতিটি ভবনের ছাদ থেকে এবং চারপাশের আঙিনার সঙ্গে নালার মাধ্যমে খালের সংযোগ করেছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।
বিশ্বের ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে তিনটি স্থাপনার সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড। সেখান থেকেই দ্বিবার্ষিক এ পুরস্কারের চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এই হাসপাতালের বিশেষত্ব, স্থানীয় নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়া হয়েছে৷ এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। জল সংরক্ষণের জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, সহজে যাতায়াত ব্যবস্থাও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল যে, হাসপাতালের সব সুবিধা থাকতে হবে৷ কিন্তু বাজেট খুবই কম ছিল। এই হাসাপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, কম বাজেটের মধ্যে স্থানীয় উপাদান ও হাতে তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে। শ্রমিকরাও স্থানীয়।”
হাসপাতালের ইনডোর এবং আউটডোর দুটি আলাদা জায়গা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুই রকম। ১০ ফুট চওড়া জলাধারের মাধ্যমে ইনডোর এবং আউটডোর আলাদা করা হয়েছে। পুরো হাসপাতালে বৃষ্টির জল ধরে রাখতে জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে৷ অতিরিক্ত জল সামনের পুকুরে যায়। হাওয়া বাতাস চলাচল করতে পারে এমন ভাবেই ওয়ার্ডগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক অসীম ক্রিস্টোফার রোজারিও জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা পরিুষেবা দেওয়া হয়। তিনটি অপারেশন থিয়েটার, নারী-পুরুষের ওয়ার্ড, একটি লেবার ওটি রয়েছে। নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে ইনকিউবেটর সুবিধাসহ নবজাতকদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও, বহির্বিভাগে চক্ষু, দন্ত, ফিজিওথেরাপি ইউনিট, পেইন সেন্টার, গাইনি, সার্জারি ইউনিট, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাবও রয়েছে৷ আউটডোরে চিকিৎসকের ফি মাত্র ১০০ টাকা। আর ৩০০ টাকায় বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট দেখানো যায়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার মানুষ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেয়েছেন।”
মন্তব্য করুন: