গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে জমি-সংক্রান্ত এক বিতর্কিত ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিক। এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকা সাংবাদিককেও মামলায় আসামি করা হয়েছে! প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই প্রভাবশালী মহলের চাপে মামলাটির এফআইআর করেছে পুলিশ বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ স্বাধীন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে। এই প্রতিবেদন তুলে ধরবে পুরো ঘটনার পটভূমি, সাংবাদিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া মামলার প্রকৃতি এবং এর নেপথ্যের রহস্য।
গাজীপুরে জমি-সংক্রান্ত এক বিতর্কিত ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিক। এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকা সাংবাদিককেও মামলায় আসামি করা হয়েছে! প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই প্রভাবশালী মহলের চাপে মামলাটির এফআইআর করেছে পুলিশ বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ স্বাধীন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে। এই প্রতিবেদন তুলে ধরবে পুরো ঘটনার পটভূমি, সাংবাদিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া মামলার প্রকৃতি এবং এর নেপথ্যের রহস্য।
গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার সুরাবাড়ি গ্রামে জমি-সংক্রান্ত এক জটিল ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক অপ্রত্যাশিতভাবে মামলার আসামি হয়েছেন। পরিস্থিতি আরও বিস্ময়কর হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, মামলায় এমন সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেন না।
জমি বিতর্কের সূত্রপাত
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান মোজাম্মেল হক একাধিক জাল দলিল তৈরি করে দখলকৃত জমি নিজের নামে নামজারি করিয়ে নেন। ওই জমিতে মো. মাহবুবুর রহমানবিশ্বাস পোল্ট্রি এন্ড ফিশ ফিডস্ লিমিটেডের নামে একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ওই জমির প্রকৃত মালিক হাবেল মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই জালিয়াতি ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত যাচাই-বাছাই শেষে জমির জাল দলিল বাতিল করেন।এরপর, হাবেল মিয়া গং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে মিস কেস দায়ের করেন (পিটিশন মোকদ্দমা নম্বর: ৫৪৮/২০২৪ এবং ৫৪৯/২০২৪)। ভূমি অফিস থেকে ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সরেজমিনে তদন্তের নোটিশ প্রদান করা হয়।
তদন্তের দিন উত্তেজনা
ভূমি অফিসের এই তদন্ত কার্যক্রম উপলক্ষ্যে দেওয়ান মোজাম্মেল হক ও তাঁর সহযোগীরা ২১ নভেম্বর ২০২৪ সকালে জমিতে ও জমির আশেপাশে সশস্ত্র লোকজন জড়ো করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে যান এবং তথ্যচিত্র ও ভিডিও ধারণ করে ফিরে আসেন।সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা
পরের দিন, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ভোরে সাংবাদিকরা জানতে পারেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানায় গভীর রাতে মাহবুব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্রোজেন ফুড শাখার পারচেজ অফিসার মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা [নম্বর: ২৪/২৪০ (55GNM)] দায়ের করেছেন। মামলায় দৈনিক জনবাণী পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি নাশিদ আহমেদ তুষারকে ১৫ নম্বর আসামি, দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও চ্যানেল এস টেলিভিশনের কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো. জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়াকে ২৯ নম্বর আসামি, এবং দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. হাসমত হাসুকে ৩০ নম্বর আসামি করা হয়। গাজীপুর জেলার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক কণ্ঠবানীর মফস্বল সম্পাদক নসির উদ্দিনকে করা হয়েছে ৩২ নম্বর আসামি।অদ্ভুত বিষয় হলো, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার খোরশেদ আলমেকে ১৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকার কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের আইন বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব হোসেন ফারুক, তিনিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাকেও ৩১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মামলার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “থানায় এসে এক কাপ চা খেয়ে যা যা তথ্য লাগবে নিয়ে যান।” তাঁর এই আচরণ পুলিশের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছে।দৈনিক জনবাণী পত্রিকা ও চ্যানেল এস টেলিভিশনের কাশিমপুর প্রতিনিধি ও কাশিমপুর থানা প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মো. জামাল আহাম্মেদ প্রধানিয়া বলেন, প্রতিপক্ষের হামলার শিকার মো. মালেক ওরফে মালু’র ৯৯৯ এ ফোনের প্রেক্ষিতে কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও দ্বিতীয় কর্মকর্তা বিপ্লব হোসেন ফারুক সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এর পর পরই ঘটনাস্থলে আসেন কাশিমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তখন থেকেই আমরা সাংবাদিকেরা তাদের (পুলিশ) সঙ্গে থেকে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করি। এবং আমরা সাংবাদিকেরা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। তার পরও কেন আমাদের নামে মামলা হলো তা বোধগম্য নয়।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা দায়ের করায় বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নতুন করে সংকটে পড়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার মতো দায়িত্বশীলতার কারণে যাঁরা নাগরিকদের প্রকৃত ঘটনা জানাতে কাজ করেন, তাঁদেরই অপরাধী বানানোর চেষ্টা ন্যায়ের পক্ষে নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এসব ঘটনা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা দায়ের করায় বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নতুন করে সংকটে পড়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার মতো দায়িত্বশীলতার কারণে যাঁরা নাগরিকদের প্রকৃত ঘটনা জানাতে কাজ করেন, তাঁদেরই অপরাধী বানানোর চেষ্টা ন্যায়ের পক্ষে নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এসব ঘটনা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে সুষ্ঠু সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন: