জুলীয়াস চৌধুরী
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে পরিচালিত হয়ে আসছে, যেখানে ছাত্রদের নিজস্ব স্বার্থের পরিবর্তে দলীয় লক্ষ্যই প্রধান হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তোলে—ছাত্র রাজনীতি কীভাবে আদর্শের পথে ফিরে আসতে পারে এবং তার যথার্থ কাঠামো কেমন হওয়া উচিত?
তবে, সময়ের সাথে সাথে ছাত্র রাজনীতির এই আদর্শিক ভূমিকা লুপ্ত হতে থাকে। বর্তমানে, ছাত্র রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, “ছাত্র রাজনীতির নামে এতদিন যা হয়েছে তা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাম্পাসভিত্তিক অঙ্গ সংগঠন। এর ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে এবং ছাত্রদের মধ্যে দলীয় বিভক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অপকর্মের জন্যই সরকার সম্প্রতি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো—এর ফলে দলীয় রাজনীতির সংস্কৃতি কি আদৌ পরিবর্তন হবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, “এ নিষেধাজ্ঞা অন্য সংগঠনগুলোর জন্য একটি বার্তা হতে পারে, তবে ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি কতটা পরিবর্তিত হবে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে।”
ছাত্র সংগঠনগুলো যদি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করত, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়ন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত।
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ছাত্ররা সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির কোনো স্থান থাকা উচিত নয়। এটি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করে।”
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে, ছাত্র সংগঠনগুলোকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতিতে সংস্কার আনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে পরিচালিত হয়ে আসছে, যেখানে ছাত্রদের নিজস্ব স্বার্থের পরিবর্তে দলীয় লক্ষ্যই প্রধান হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তোলে—ছাত্র রাজনীতি কীভাবে আদর্শের পথে ফিরে আসতে পারে এবং তার যথার্থ কাঠামো কেমন হওয়া উচিত?
ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিক এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত, ছাত্র রাজনীতি সবসময়ই একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠার পক্ষে লড়াই করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমস্যাগুলো নিয়ে মুখ খুলেছে।তবে, সময়ের সাথে সাথে ছাত্র রাজনীতির এই আদর্শিক ভূমিকা লুপ্ত হতে থাকে। বর্তমানে, ছাত্র রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
দলীয় রাজনীতি বনাম ছাত্র রাজনীতি
বর্তমান বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি বলতে আসলে যা বোঝায় তা হলো দলীয় রাজনীতি। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে, ছাত্রদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে মনোযোগী হওয়ার পরিবর্তে, দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, “ছাত্র রাজনীতির নামে এতদিন যা হয়েছে তা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাম্পাসভিত্তিক অঙ্গ সংগঠন। এর ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে এবং ছাত্রদের মধ্যে দলীয় বিভক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
ছাত্র সংগঠনগুলোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড
গত কয়েক বছর ধরে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। এছাড়া, ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানেও ছাত্রলীগের ভূমিকা বিতর্কিত ছিল।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অপকর্মের জন্যই সরকার সম্প্রতি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো—এর ফলে দলীয় রাজনীতির সংস্কৃতি কি আদৌ পরিবর্তন হবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, “এ নিষেধাজ্ঞা অন্য সংগঠনগুলোর জন্য একটি বার্তা হতে পারে, তবে ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি কতটা পরিবর্তিত হবে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে।”
শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ছাত্র রাজনীতি
ছাত্র রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জোবারিদা নাসরীন মনে করেন, “ছাত্র সংগঠনগুলোর মূল কাজ হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ হওয়া উচিত।”ছাত্র সংগঠনগুলো যদি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করত, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়ন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত।
গণতান্ত্রিক পরিবেশে ছাত্র রাজনীতি
গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্র রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে, ছাত্র সংগঠনগুলোর দলীয় রাজনীতি থেকে আলাদা থাকা উচিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা যদি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে চায়, তবে তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতির স্থান নেই।বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ছাত্ররা সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির কোনো স্থান থাকা উচিত নয়। এটি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করে।”
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে, ছাত্র সংগঠনগুলোকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতিতে সংস্কার আনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
মন্তব্য করুন: