করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
জুলাই-আগস্টে টানা ৩৬ দিন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নির্মূলে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যা-গণহত্যায় জড়িত, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন: মোঃ মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এডভোকেট তাজুল ইসলাম এটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মোঃ মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী এটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট-১৯৭৩ এর সেকশন ৮ (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ এ্যাক্ট এর সেকশন ৩ এর অপরাধসমূহের তদন্ত পরিচালনায় তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হলো। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাগণ হলেন: পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি মোঃ মাজহারুল হক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরী, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুল ইসলাম, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জানে আলম খান, পুলিশের ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুল ঢাকার সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ আব্দুর রউফ, সিআইডি ঢাকা মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইউনুস, চারঘাট মডেল থানা রাজশাহীর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মাসুদ পারভেজ, আরআরএফ ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আলমগীর সরকার, সিআইডি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তাগণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত বিচার অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তদন্তকার্য সম্পাদন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনকে সহায়তা করবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন এবং জনবল নিয়োগ, অন্তর্ভুক্তকরণ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে ইতোপূর্বে জারি করা প্রজ্ঞাপনসমূহ বাতিল বলে গণ্য হবে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউর মোঃ তাজুল ইসলাম বাসসকে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল শিগগিরই পুনর্গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ট্র্যাইব্যুনাল পুনর্গঠন বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। শিগগিরই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হত্যা, গণহত্যা ও গুলিতে আহতদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হচ্ছে। এসব অভিযোগে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডারদেরকে আসামি করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।
সাবেক এডিশনাল ডিআইজি মাজহারুল হক তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমের কার্যক্রম চলমান থাকলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি না থাকায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার গত ১৩ জুলাই অবসরে যান। অন্য এক সদস্য বিচারপতি হাইকোর্টে ফিরে গেছেন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারপতি নেই।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার তথ্য উপাত্ত চেয়ে সকল গণমাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, গণহত্যার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে আমরা হাসপাতাল গুলোতে পরিদর্শন করেছি। জুলাই -আগস্ট গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, বিভিন্ন কবরস্থান পরিচালনাকারীদের কাছেও তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আন্দোলনের সবচাইতে বড় সাক্ষী হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ বিচারের সবচেয়ে বড় সাক্ষি তারা। আমরা এ আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে মত বিনিময় করতেও উদ্যোগ নিয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার পর গত ১৪ বছরে ট্রাইব্যুনাল ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। স্কাইপি কেলেঙ্কারি, সাক্ষী গুম ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার নানা অভিযোগ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নবগঠিত প্রসিকিউশনের চিফ প্রসিকিউটর মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধ পরিকর।
১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের ৩ (১) ধারায় বলা আছে, আইনের ২নং উপ-ধারায় উল্লিখিত যে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংস্থা বা কোনো সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা সহায়ক বাহিনীর কোনো সদস্যের জাতীয়তা যাই হোক না কেন, তা যদি এই আইন প্রবর্তনের আগে বা পরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্য বিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক লোক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র-জনতা। তাদের অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন।
জুলাই-আগস্টে টানা ৩৬ দিন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নির্মূলে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যা-গণহত্যায় জড়িত, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এডভোকেট তাজুল ইসলাম ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও চার আইনজীবীকে প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন: মোঃ মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এডভোকেট তাজুল ইসলাম এটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। বাকি চার প্রসিকিউটরের মধ্যে মোঃ মিজানুল ইসলাম অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সহকারী এটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদা পাবেন। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর সেকশন ৭ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার জন্য পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর থাকবে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট-১৯৭৩ এর সেকশন ৮ (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ এ্যাক্ট এর সেকশন ৩ এর অপরাধসমূহের তদন্ত পরিচালনায় তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হলো। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাগণ হলেন: পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি মোঃ মাজহারুল হক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরী, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর, পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুল ইসলাম, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জানে আলম খান, পুলিশের ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুল ঢাকার সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ আব্দুর রউফ, সিআইডি ঢাকা মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইউনুস, চারঘাট মডেল থানা রাজশাহীর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মাসুদ পারভেজ, আরআরএফ ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ আলমগীর সরকার, সিআইডি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তাগণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত বিচার অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তদন্তকার্য সম্পাদন ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনকে সহায়তা করবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন এবং জনবল নিয়োগ, অন্তর্ভুক্তকরণ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে ইতোপূর্বে জারি করা প্রজ্ঞাপনসমূহ বাতিল বলে গণ্য হবে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউর মোঃ তাজুল ইসলাম বাসসকে জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল শিগগিরই পুনর্গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ট্র্যাইব্যুনাল পুনর্গঠন বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন। শিগগিরই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হত্যা, গণহত্যা ও গুলিতে আহতদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হচ্ছে। এসব অভিযোগে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডারদেরকে আসামি করা হচ্ছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।
সাবেক এডিশনাল ডিআইজি মাজহারুল হক তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমের কার্যক্রম চলমান থাকলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি না থাকায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার গত ১৩ জুলাই অবসরে যান। অন্য এক সদস্য বিচারপতি হাইকোর্টে ফিরে গেছেন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারপতি নেই।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় বিগত সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার তথ্য উপাত্ত চেয়ে সকল গণমাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, গণহত্যার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে আমরা হাসপাতাল গুলোতে পরিদর্শন করেছি। জুলাই -আগস্ট গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, বিভিন্ন কবরস্থান পরিচালনাকারীদের কাছেও তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আন্দোলনের সবচাইতে বড় সাক্ষী হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ বিচারের সবচেয়ে বড় সাক্ষি তারা। আমরা এ আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে মত বিনিময় করতেও উদ্যোগ নিয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার পর গত ১৪ বছরে ট্রাইব্যুনাল ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। স্কাইপি কেলেঙ্কারি, সাক্ষী গুম ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার নানা অভিযোগ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নবগঠিত প্রসিকিউশনের চিফ প্রসিকিউটর মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধ পরিকর।
১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের ৩ (১) ধারায় বলা আছে, আইনের ২নং উপ-ধারায় উল্লিখিত যে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংস্থা বা কোনো সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা সহায়ক বাহিনীর কোনো সদস্যের জাতীয়তা যাই হোক না কেন, তা যদি এই আইন প্রবর্তনের আগে বা পরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্য বিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক লোক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র-জনতা। তাদের অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন।
মন্তব্য করুন: