করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারনা শুরু না হলেও থেমে নেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি। নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপির ২৪ জন নেতা-কর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া মেয়র পদে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলামও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডে মেয়র পদে ১২ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৩০০ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই বাছায়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় বর্তমানে মেয়র পদে আছেন ৯ জন আর কাউন্সিলর পদে আছেন ২৭৩ জন জন। মেয়র পদে একজন এবং কাউন্সিলর পদে অন্তত ২৩ প্রত্যক্ষভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির নেতা, কর্মী ও সমর্থক। এদের মধ্যে ২৩ জন আছেন বিএনপির মহানগর, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতা। এদের মধ্যে ৮ জনই ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমার জানামতে বা যতটুকু চিনি এমন ২৩ থেকে ২৪ জন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছে। আর মেয়র পদে যিনি নির্বাচন করছেন তার দলীয় কোনো পদ পদবী নেই তবে বাবা (বর্তমানে জেলে আছেন) ও চাচা বিএনপির নেতা। আমাদের স্থায়ী কমিটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে না, কাউকে সমর্থনও করা যাবে না। এক কথায় ভোট বর্জন করতে হবে এই নির্বাচনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৭ টি। এরমধ্যে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটি গাজীপুরের শহরের কাছে। সেই ওয়ার্ডে গত দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর হলেন হান্নান মিয়া হান্নু। তিনি সদর মেট্রো থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ঈদের আগে থেকেই শুভেচ্ছো জানিয়ে আসছেন। এখনও তিনি প্রচারনা চালাচ্ছেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া—মহল্লায় বিএনপিপন্থী প্রার্থীরা পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রার্থীরা প্রার্থিতা ঘোষণা করে ভোটারদের কাছে দোয়া চাইছেন। অনেক প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী—সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সরব প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম শুক্রবার টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। সেখানে নামাজ শেষে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নির্বাচনে বিএনপির নেতাদের অংশগ্রহণ নিয়ে মহানগর বিএনপির কয়েক জন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডে (জয়ারটেক-নসের মার্কেট) কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন আলম, ১৫নং ওয়ার্ডে (ভোগড়া) কাউন্সিলর শ্রমিক দল নেতা ফয়সাল আহমাদ সরকার, ১৬নং ওয়ার্ডের (দিঘিরচালা-বারবৈকা) বর্তমান কাউন্সিলর বাসন থানা বিএনপির সদস্য সচিব মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মুসা, বাসন থানার ১৭নং ওয়ার্ডে (চান্দনা-যোগীতলা) ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, ১৯নং ওয়ার্ডের (কাউলতিয়া-সালনা) বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা তানভীর আহমেদ, সদর মেট্রো থানার ২২নং ওয়ার্ডে (বাংলাবাজার-বাহাদুরপুর) বিএনপি নেতা ছবদের হাসান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (পোড়াবাড়ি-ভাওরাইদ) বিএনপি সমর্থক খোরশেদ আলম, ২৪নং ওয়ার্ডে (শিমুলতলী-চতর) বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রশিদ খান, ২৫নং ওয়ার্ডে (ভুরুলিয়া) বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি সমর্থক মজিবুর রহমান, ২৬নং ওয়ার্ডের (বিলাসপুর-মারিয়ালী) বর্তমান কাউন্সিলর ও সদর মেট্রো থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান মিয়া হান্নু, ২৮নং ওয়ার্ডের (জয়দেবপুর শহর) বর্তমান কাউন্সিলর সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক হাসান আজমল ভুঁইয়া, ২৯নং ওয়ার্ডের (ছোট দেওড়া) বিএনপি নেতা খায়রুল আলম ও সাবেক ছাত্রদল নেতা জিএস মনির হোসেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে (কানাইয়া-নীলেরপাড়া) বিএনপি সমর্থক শামসুল আলম অরুণ কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া গাছা থানা এলাকায় ৩৪নং ওয়ার্ডে (শরীফপুর) বিএনপি সমর্থক সাবেক কাউন্সিলর মো. মাহফুজুর রহমান ও ৩৫নং ওয়ার্ডে (বাদে কলমেশ্বর) গাছা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ ফারুক হোসেন, পূবাইল থানা এলাকার ৪০নং ওয়ার্ডের (মেঘডুবি) পুবাইল থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে (তালটিয়া) বিএনপির নেতা সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের (টঙ্গীর দত্তপাড়া) বর্তমান কাউন্সিলর টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন আহমেদ, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মিলন হোসেন মেট্রো থানা বিএনপির সদস্য, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের (মিলগেইট) কাউন্সিলর শ্রমিক দল নেতা আবুল হোসেন ও সেলিম মিয়া প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সদর মেট্রো থানার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় কোনো নির্দেশনা এখন পযন্ত পাইনি। কাউন্সিলররা যেহেতু দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাই কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া দুই মেয়াদে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি।
অপরদিকে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা ও সাবেক বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছেন।
গাজীপুর মহানগর বাসন থানা বিএনপির আহবায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের বিষয়ে দল থেকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ নির্বাচন করলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা কাউন্সিলর পদে কেউ নির্বাচন করলেও আমরা তার সাথে নেই।
মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম বলেন, আমি যখন নির্বাচন করবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে চায়। বর্তমানের সরকারের আস্থা শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। জাহাঙ্গীর আলম এবং আজমত উলা খান দুই জনই নৌকার মানুষ। সেই ক্ষেত্রে আমি চিন্তা করলাম যেহেতু জাতীয়তাবাদীর শান্তির একটি বড় অবস্থান গাজীপুরে আছে। সে ক্ষেত্রে আমার একটা সম্ভাবনা রয়েছে এই নির্বাচনী বৈতরনি পার হওয়ার জন্য। সেইসব দিক চিন্তা করে আমার নির্বাচনে আসা। আমার নির্বাচন করতে কোনো বাধা নিষেধ আসেনি।
মন্তব্য করুন: