ছবিতে (গোল চিহ্নিত) শান্তনূর (বামে), হৃদয় (ডানে) |
করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর
গাজীপুরের কোনাবাড়ি-কাশিমপুর এলাকায় এক স্থানীয় নেতার ছত্রছায়ায় ধর্ষণ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকী দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের সখিপুর থানার যোগিরকুফা গ্রামের মো. বাবুল হোসেনের ছেলে আসামী মো. আশিকুর রহমান (আশিক) (২৮) কোনাবাড়ির এশরার নগর হাউজিং সোসাইটির প্রদীপের বাড়িতে ভাড়ায় থাকত। ধর্ষণের শিকার কিশোরিটি কাশিমপুর থানার জরুন এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত।
আসামী আশিকুর কিশোরীর মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করে বারংবার ফোন করে কথা বলে কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে আসামী আশিকুর কিশোরীর বাসায় গিয়ে কিশোরীর পিতা-মাতার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এক পর্যায়ে আসামী আশিকুর তার পিতা মো. বাবুল হোসেন, ভাই রাশেদ, সৎ ভাই শাওন, চাচাত ভাই রাব্বি, ব্যবসায়িক পার্টনার মনির, বন্ধু শান্তনূর, তার ফুপা ও ফুপু নিলু কিশোরীর বাসায় এসে কিশোরীর পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা করে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিয়ের জন্য উভয় পরিবার রাজি হয় এবং আসামী আশিকুরের পরিবার বিয়ে দিন-তারিখ নির্ধারণের জন্য সময় নেয়। পরবর্তীতে আসামী আশিকুর প্রায়ই কিশোরীর বাসায় আসা-যাওয়া করত। এর মধ্যে আসামী আশিকুর কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। বিভিন্ন সময়ে কিশোরীকে তার পিতার বাসায়, আশিকুরের নিজের বাসায়, জেলখানা রোডস্থ আসামী আশিকুরের ফুপুর বাসায় এবং বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে কিশোরীকে ফুসলিয়ে আসামী আশিকুর বারংবার শারিরীক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে।
এক সময় জানা যায় যে আসামী আশিকুরের আগের একজন স্ত্রী রয়েছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উভর পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। তখন আসামী আশিকুর তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেয়। এর পর আসামী আশিকুর বিভিন্ন টালবাহানা করে বিয়ের জন্য সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। গত ২ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে আসামী আশিকুর কিশোরীর বাসায় এসে কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করার সময় বাসার পাশ্ববর্তী রুমের লোকজন আসামী আশিকুরকে অপ্রীতিকর অবস্থায় আটক করে। এ ঘটনায় আসামী আশিকুরের ফুপু ও ফুপা এসে বিষয়টি জেনে কিশোরীর সঙ্গে আশিকুরের বিয়ের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের সময় চায়। এমতাবস্থায় আসামী আশিকুরের ভাই রাশেদ, চাচাত ভাই রাব্বি ও হৃদয়, বন্ধু শান্তনূরসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসজ্জিত ১০/১২ জনের একদল সন্ত্রাসী কিশোরীর বাসায় এসে কিশোরী ও তার মা এবং পাশের রুমের ভাড়াটিয়াকে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসামী আশিকুরকে নিয়ে যায়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করে। বিষয়টি কাশিমপুর থানায় জানানো হলে পুলিশ আসামী আশিকুরকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিমপুর থানায় মামলা ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামী আশিকুর বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
ছবিতে (গোল চিহ্নিত) রাব্বি |
মামলার পর কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে। আসামী আশিকুরের ভাই-বন্ধু ও কিছু সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জায়গায় ও বিভিন্ন ভাবে ধর্ষণ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকী দিয়ে কিশোরী ও পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাপন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
গত ০৬/১০/২০২২ তারিখে আনুমানিক সকাল ১০:০০ ঘটিকায় ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরী ও মা-বাবা আইনজীবী নিয়োগের জন্য গাজীপুর আদালত এলাকায় আসলে রাশেদ, হৃদয় ও রাব্বি সহ ৭/৮ জন সন্ত্রাসী ধর্ষণ মামলার বাদী ওই কিশোরীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে মামলা তুলে না নিলে পরবর্তীতে বাদীকে তুলে নিবে এবং প্রাণনাশের হুমকী দেয়। এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
গত ১৬/১০/২০২২ তারিখে বিকেল ২:৪০ মিনিটে ০১৮১৪৬২৮৪৮২ নম্বর থেকে রাশেদ নামের এক সন্ত্রাসী ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর মোবাইলে ফোন করে “আশিক ভাই জেল থেকে বের হওয়ার পর তোদেরকে সময় নিয়ে মারব” বলে হুমকি দেয়। এর আগে ও পরেও সস্ত্রাসী রাশেদ বিভিন্ন সময় ফোন করে কিশোরীর মোবাইলে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকী প্রদান করেছে।
গত ১৮/১০/২০২২ তারিখে দুপুর ১:৩৩ মিনিটে এবং একই দিনে রাত ৮:৫৬ মিনিটে ০১৯৪৬৮১৩৮৭১ শান্তনূর ও অপরজন হৃদয় পরিচয়ে ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর মোবাইলে ফোন করে “দ্রুত মামলা তুলে না নিলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রি করে দিব” বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে একই নম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম হুমকী দিয়ে আসছে।
গত ২৩/১০/২০২২ তারিখে সন্ধ্যায় আদালত থেকে ফেরার পথে কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকায় হাইওয়ে থানার পূর্বপাশে ব্রীজের ওপর দুটি মোটরসাইকেলে শান্তনূর ও রাব্বি সহ ৫জন সন্ত্রসী সিএনজি অটোরিক্সার গতিরোধ করে ধর্ষণ মামলার বাদী কিশোরীর মা-বাবাকে “মামলা তুলে না নিলে তোদের দুই মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রি করে দিব” বলে সামনাসামনি হুমকী দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।
গত ০৬/১১/২০২২ তারিখে বাদীর মা অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আনুমানিক রাত ১০:২০ মিনিটে কোনাবাড়ী-জরুন রোডে আসামী পক্ষের লোকজন মোটরসাইকেল থেকে বাদীর মাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে “মামলা তুলে না নিলে এবং আমাদের কথা না শুনলে কোনাবাড়ী এলাকায় চাকরি ও বসবাস করতে পারবি না” বলে হুমকী দেয়।
সুবিচার পেতে এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য বাদী পক্ষ মিডিয়া, প্রশাসন, সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আসামী আশিকুর রহমান (আশিক) |
মন্তব্য করুন: