করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের প্রয়াসে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ভাষানীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের সভাপতি মো. আতিক মাহমুদ (শাহ্ সুলতান আতিক মাহমুদ) আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি ২০২২) গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরনবী সরদার, সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন এবং সিনিয়র সাংবাদিক ডা. মোঃ মজিবুর রহমান পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্রভাষা’ প্রসঙ্গে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।’ এর মানে সংবিধান যেদিন প্রণীত হলো, সেদিন থেকেই এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। প্রশাসনে বাংলার ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু এর উল্টো পাশে অন্ধকার দিকটি অনেক বেশি দৃশ্যমান। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে দেশে আইন হয়েছে ১৯৮৭ সালে। আইন করার পরও সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন হয়নি, বরং ভাষা আন্দোলনের ঊনসত্তর এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও উপেক্ষিত বাংলা। উচ্চ আদালতে বাংলা চালু হয়নি। উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলা ভাষা মূল্যহীন। উপরন্তু বাংলা, ইংরেজির মিশ্রণে এক জগাখিচুড়ি ভাষার প্রচলনে হুমকির মুখে প্রমিত বাংলা। সরকারি অফিস, আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে সচেতনতার বিপর্যয় প্রবলভাবে গ্রাস করেছে। প্রায় সর্বস্তরে আজ বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে।
স্মারকলিপিতে বলা আরো হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির এক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত উচ্চারণে ঘোষণা দিয়েছিলেন-‘ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করব না। কারণ তাহলে কোনোদিনই বাংলা চালু করা সম্ভবপর হবে না। এই অবস্থায় হয়তো কিছু কিছু ভুল হবে, তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।’
স্মারকলিপিতে বলা আরো হয়, বাংলা ভাষা নিয়ে বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষানীতি, পররাষ্ট্র নীতি, কৃষিনীতি, খাদ্যনীতি, ক্রীড়ানীতি, বাল্যবিবাহনীতি এবং আরো কত নীতি আছে! কিন্তু ভাষানীতি নেই! একটি ভাষানীতি থাকলে- শিক্ষার মাধ্যম কী হবে, প্রশাসনের ভাষা কী হবে, বানানরীতি কী হবে, আদিবাসীদের ভাষা কী পর্যায়ে থাকবে, ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষার অবস্থান কী হবে, কম্পিউটারে ভাষার পরিস্থিতি কী হবে, পরিভাষা কী হবে, রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা কী হবে- এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া যেতো। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্দিষ্ট ভাষানীতি গ্রহণ আজ একান্ত প্রয়োজন।
স্মারকলিপিতে বাস্তবিকভাবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের প্রয়াসে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ভাষানীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
মন্তব্য করুন: