রাহিম সরকার, গাজীপুর
পবিত্রতা রক্ষার নামে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে গাজীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুক্তমঞ্চ। এতে করে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠানাদি করার পরিবেশ ও উদ্দেশ্য দারুণভাবে ব্যহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা।মূল নকশার বাইরে অপরিকল্পিতভাবে শহীদ মিনারের সামনের সিঁড়ির উপর দিয়ে আরসিসি কলাম করা হচ্ছে দেখে সাংস্কৃতিক কর্মীরা শনিবার সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে আপত্তির কথা উত্থাপন করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এটাকে সংরক্ষিত করা হবে। যাতে যে কেউ এখানে ঢুকে শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর ভাস্কর্য শিল্পী কুয়াশা বিন্দুকে দিয়ে এই শহীদ মিনারের খসড়া পরিকল্পনা ও নকশা প্রস্তুত করান।
শিল্পী কুয়াশা বিন্দু জানান, গাজীপুর এলজিডির তত্ত্বাবধানে চূড়ান্ত নকশা তৈরি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ করা হয়। এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। টয়লেট ও ড্রেসিংরুম করার কথা ছিলো এখানে। কিন্তু তা করা হয়নি এখনও।
গাজীপুর এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের কাজ সমাপ্ত হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বর্তমানের এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল জানান, জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা ও তদারকিতে আমরা এ কাজটি করে দিচ্ছি।
গাজীপুর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান মজনু বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের প্রস্তুতি সভায় আমরা ওই কাজটি কিভাবে করলে শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালাতে কোন বিঘ্ন ঘটবে তা উপস্থাপন করেছি। কিন্তু সে প্রস্তাবের সাথে এ কাজের কোন মিল নেই। এ রকম অপরিকল্পিত কাজে শহীদ মিনার কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
সাংবাদিক ও অভিনয় শিল্পী সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন) বলেন, শহীদ মিনারের মুক্তমঞ্চ কিভাবে সাংস্কৃতিক কর্মীরা সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারবে- তা মাথায় রেখে এর পবিত্রতা রক্ষার কাজটি করতে হবে। কিন্তু শহীদ মিনারের সিঁড়ির উপর দিয়ে আরসিসি পিলার করে পবিত্রতা রক্ষার নামে যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে তা শহীদ মিনারকে শৃঙ্খলবদ্ধ করার মতো বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আমার মতে এরকমভাবে ঘেরাটোপ তৈরি করার অর্থ হচ্ছে- একুশের চেতনাকে হত্যা করা।
শনিবার রাত ৮টায় সাংস্কৃতিককর্মীরা গাজীপুর প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এতে অভিনয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিককর্মী হাসিমুন, আশরাফী ফরিদ, খন্দকার রফিক, সংগীতা রোজারিও, হায়দার সিদ্দিকী উদয়, সাজেদা রোজী, নাদিম মোড়ল, অন্তরা, মামুন শেখ, ইউসুফ প্রধান ও অন্যান্যরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। তাঁরা অবিলম্বে শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চকে অবরুদ্ধ না করে পরিকল্পিত উপায়ে এর পবিত্রতা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কাছে।
এ সময় গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার সংহতি প্রকাশ করে তাদের দাবির সাথে একমত প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন: