করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
দেশের সামর্থ্যবান মানুষকে করের জালে আনতে বেশকিছু সেবা গ্রহণে কর শনাক্ত নম্বর (টিআইএন) থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৪০ ধরনের সেবা নিতে হলে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক।
২০১৪ সালে যখন ১৩ ডিজিটের ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (ই-টিআইএন) চালু করা হয় তখন ২৫ ধরনের সেবায় ই-টিআইএন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, জমি ক্রয়, ব্যবসা নিবন্ধন সনদ (ট্রেড লাইন্সেস), আমদানি, রপ্তানিসহ ২৫টি সেবা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হতে থাকে।
প্রতি বছরই বাজেটে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার তালিকায় নতুন নতুন খাত যুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও বেশ কিছু সরকারি সেবা বা কাজের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে শুধু টিআইএন সার্টিফিকেট দিয়ে ওইসব সেবা নেওয়া যাবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে টিআইএনের স্থলে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার রশিদ (প্রাপ্তি স্বীকার বা জমা স্লিপ) বা ট্যাক্স সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৪০ ধরনের সেবা পেতে হলে রিটার্ন জমা না দেওয়ার বিকল্প থাকবে না করদাতাদের।
এর প্রধান লক্ষ্য বর্তমানে নিবন্ধিত প্রায় ৮০ লাখ টিআইএনধারীকে কর জালের আওতায় আনা। করের আওতা বৃদ্ধি করতে ও প্রত্যক্ষ কর আদায়ে আরো গতি আনতে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা অর্থ মন্ত্রণালয়সহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যদিও এনবিআরের এমন উদ্যোগ হঠাৎ করে আসেনি। টিআইএনধারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়লেও করদাতাদের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রবণতা তেমন বাড়েনি কিংবা এনবিআরও করদাতাদের বাধ্য করার মতো কঠিন কোনো পদক্ষেপে যায়নি। বর্তমানে প্রায় ৮০ লাখ ব্যক্তি টিআইএন নিবন্ধন নিলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র সাড়ে ২৬ লাখ করদাতা।
এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়নের শুরুতে এনবিআর থেকে দেশের সব কর অঞ্চলগুলো নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সুপারিশ চাওয়া হয়, কীভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বাড়ানো যায়। প্রায় সব কর অঞ্চল থেকে সুপারিশে বলা হয় আইন অনুসারে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও লোকবল সংকট ও করভীতির কারণে প্রকৃতপক্ষে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাই সবচেয়ে সহজ ও প্রকৃষ্ট পদ্ধতি হবে যদি টিআইএনের পরিবর্তে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারকে বাধ্যতামূলক করা হয়। তাহলে করদাতারা বাধ্য প্রয়োজনীয় সব সেবা পেতে ঠিকই রিটার্ন জমা দেবেন। এর ফলে আয়কর রিটার্ন দাখিল অন্ততপক্ষে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
সরকারি যেসব সেবা বা কাজের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক : সার্বিকভাবে প্রায় ৪০ ধরনের কাজে টিআইএন প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে রয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক, মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন প্রয়োজন।
বিশেষ পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে যেমন- ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি; ড্রাগ লাইসেন্সধারী ইত্যাদি।
জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন প্রয়োজন।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই টিআইএন লাগে। এমনকি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে যাদের বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি, তাদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক।
চলতি অর্থবছরে যোগ করা হয় ২ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয় কিংবা গ্রামে বা শহরে বাড়ির নকশা অনুমোদনে টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়।
এর আগে করের আওতা বৃদ্ধি ও আয়কর ফাঁকি বন্ধ করতে মোটরযান ও নৌ-যান, সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছিল এনবিআর। এনবিআর চেয়ারম্যান ২০২১ সালের ৩১ মার্চ এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিগুলো দেন। এছাড়া করের আওতা বাড়াতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সিটি করপোরেশনের ডাটাবেজ সংগ্রহ করে রিটার্ন না দেওয়া ব্যক্তিদের খোঁজার উদ্যোগও নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সর্বাধিক পঠিত$type=one$s=0$rm=0$show=home
সর্বশেষ আপডেট$type=blogging$l=0$c=12$m=0$s=hide$rm=0$va=0$hide=home
- অভিবাসন
- অর্থ ও বাণিজ্য
- আইন ও অপরাধ
- আন্তর্জাতিক
- আবহাওয়া
- ইটালি
- ইতালি
- এভিয়েশন
- কক্সবাজার
- কলকাতা
- কুড়িগ্রাম
- কুমিল্লা
- কুয়েত
- কৃষি
- ক্যালিফোর্নিয়া
- খাগড়াছড়ি
- খাদ্য
- খেলা
- গণমাধ্যম
- গাজীপুর
- গোপালগঞ্জ
- জাতীয়
- জাপান
- জীবনধারা
- ঢাকা
- ঢাবি
- দরকারি তথ্য
- দিনাজপুর
- নরসিংদী
- নিউইয়র্ক
- নিউজিল্যান্ড
- পরিবহণ
- পরিবেশ
- পোশাক শিল্প
- প্রযুক্তি
- ফিনল্যান্ড
- ফেনী
- বাংলাদেশ
- বিচিত্র
- বিজ্ঞান
- বিনোদন
- বিশেষ প্রতিবেদন
- ব্যাংকিং
- ভারত
- ভেনেজুয়েলা
- ভ্রমণ
- মতামত
- মানিকগঞ্জ
- মালয়েশিয়া
- মিয়ানমার
- যুক্তরাজ্য
- যুক্তরাষ্ট্র
- যোগযোগ
- রাজনীতি
- লক্ষ্মীপুর
- লিবিয়া
- শিক্ষা
- শ্রীলঙ্কা
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- সারাদেশ
- সিরাজগঞ্জ
- সৌদি আরব
- স্পেন
- স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন: