
করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর
গাজীপুর মহানগরের ঝাঁজর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ৯ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১ সদস্যরা। সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলো-গাইবান্ধার মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৪), মোঃ শাহিন ওরফে সজিব (৩৩), মোঃ শহিদ (৩৮) ও মোঃ রনি সরকার (২৪), রংপুরের মো. আয়নাল হক (৩৯), আজিজুল ইসলাম (৩২), উজ্জল চন্দ্র মহন্ত (২৭), মোঃ আন্ডু মিয়া (৫৭) এবং নীল ফামারীর মাঃ আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু মিয়া (৪০)।
র্যাব-১-এর সহকারী পরিচালক নোমান আহমদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে সোমবার দুপুরে জানানো হয়, রোববার মধ্যরাতে একদল সশস্ত্র ডাকাত গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর পেয়ে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর আভিযানিক দল সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ওই ৯জনকে আটক ও তাদের হেফাজত থেকে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ওয়ান শুটারগান, ১ টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ২ টি ওয়ান শুটার গানের গুলি, ২ টি ছোরা, ১ টি রামদা, ১ টি দা, ৫ টি গামছা, ১ টি রশি, ১ টি করাত, ২ টি টর্চ লাইট, ১ টি বস্তা, ১১ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ১হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে সোমবার গাছা থানায় মামলা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০/১২ জন। এই ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলাম। তার অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া যারা ডাকাতির পরিকল্পনা এবং অন্যান্য ডাকাতদের সংঘবদ্ধ করে থাকে। তারা বিগত ৫ বছর যাবত একই সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল।

শহিদুল ইসলাম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে উক্ত ডাকাত চক্রের মূলহোতা। সে পূর্বে রিক্সা চালনা পেশা সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে সে সহজলভ্য এবং বেশী অর্থের লোভে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়ে। তারা সাধারণত প্রতিমাসে ২/৩ বার ৬/৯ জনের দলে সংঘটিত হয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরবর্তীতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মহাসড়ক কেন্দ্রিক ডাকাতির সাথে জড়িত। ডাকাতির কৌশল হিসাবে তারা সড়কসমূহের নির্জন স্থানে রাতের আধাঁরে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। পরবর্তীতে তারা ইজিবাইক/অটোরিক্সা/সিএনজি/মোটর সাইকেল/ছোট পিকআপসহ ছোট আকারের যানবাহনকে টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে ভিকটিমদেরকে জিম্মি করে ডাকাতি করত। তারা আসন্ন ঈদ-উল-আযহা’কে কেন্দ্র করে মহাসড়কে বড় আকারে ডাকাতি করার জন্য গাজীপুর জেলার গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় সংঘটিত হয়েছিল। আটককৃত শহিদুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ৬ টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আয়নাল মিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে উক্ত ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং ডাকাতি সংঘটনের জন্য সে গাজীপুরের জেলার গাছা থানাধীন ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিল। সে দীর্ঘ ৫ বছর যাবত চুরি এবং ডাকাতির চক্রের সাথে জড়িত। সে পূর্বে পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক ছিল। সে প্রথমে সহজলভ্য এবং অধিক অর্থের আশায় তার নিজ এলাকায় ছোট ছোট চুরির সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে একই এলাকার উক্ত ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলামের সাথে পরিচয়ের পর তার সাথে ডাকাতি চক্রে জড়িয়ে পড়ে। আইনাল মিয়ার মূল দায়িত্ব ছিল জায়গা নির্ধারণ এবং অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের সংঘবদ্ধ করা। এছাড়া ডাকাতির স্থান এবং ক্ষণ নির্ধারিত হলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের নিজ এলাকা থেকে নিয়ে এসে তার আবাসস্থলে অবস্থান করায়। সাধারণত ডাকাতির পর লুন্ঠিত মালামাল সে ডাকাত সর্দারের নির্দেশে অন্যান্য সদস্যদের মাঝে বন্টন করত। এছাড়াও সে ছোট ছোট মাদক চোরাচালানের সাথেও জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। আটককৃত আইনালের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতিসহ ৪ টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আন্ডু মিয়াকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী এবং পরামর্শদাতা। সে ১৯৯৫ সাল হতে চুরি এবং ডাকাতির চক্রের সাথে জড়িত। এর পূর্বে সে পেশায় একজন চা দোকানি ছিল। পূর্বে সে অন্য এক ডাকাত দলের সর্দার খোকন মিয়ার সাথে ডাকাতি করলেও পরবর্তীতে খোকন মিয়া ২০১৮ সালে ডাকাতির মামলায় জেলে গেলে সে শহিদুলের ডাকাত দলের সাথে যোগদান করে। দীর্ঘদিন যাবত ডাকাতির পেশায় জড়িত থাকায় সে সাধারণত উক্ত ডাকাত চক্রের পরামর্শদাতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ ০৪ টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত শহিদকে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানা যায় যে, সে উক্ত ডাকাত চক্রের সাথে গত ৩ বছর যাবত জড়িত। সে পেশায় অটো রিক্সাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসাবে পরিচিত। উক্ত ডাকাত চক্রে সে ডাকাতির পর পলায়ন পরিকল্পনাকারী এবং পলায়নে সহায়তার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করত। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং চুরিসহ ১২ টি মামলা রয়েছে।
এছাড়াও ডাকাত চক্রের সদস্য শাহিন এর বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ ২ টি, উজ্জলের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ ২ টি, আজিজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এর ১ টি, আব্দুল হাকিম এবং রনি সরকারের বিরুদ্ধে চুরির ১ টি করে মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভিডিও...
মন্তব্য করুন: