
রাহিম সরকার, গাজীপুর
১৯ বছর পর ১৯ মে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গাজীপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। সম্মেলনের আগের দিন বুধবার বিকেলেও চলছে শেষ পর্যায়ের খুটিনাটি কাজ। সম্মেলনে আধুনিক প্যান্ডেল নিমার্ণসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে কোটি টাকার উপরে বাজেট রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ সম্মেলনকে ঘিরে গাজীপুর জেলা, উপজেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেতাদের ছবিসহ রং-বেরংয়ের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও তোরণ শোভা পাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে বেশ উদ্দীপনা।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং সম্মেলনের মঞ্চ ও সজ্জা উপ-কমিটির আহŸায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৪মে থেকে গাজীপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল ও মঞ্চতৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার সাউন্ড ফেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এসব নির্মাণ করার কাজ দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ৫০০ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০০ফুট প্রস্থের ওয়াটার প্রুফ টেন্ট (প্যান্ডেল) থাকছে ২৫হাজার লোকের (ডেলিগেট) আসন ব্যবস্থা। ২৫হাজার ডেলিগেটদের জন্য বিভিন্ন হোটেলে ২৫হাজার প্যাকেট তৈরি মোরগ-পোলাও এবং পানীয়ও থাকবে। থাকছে ৬০ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ফুট প্রস্থের নৌকার কাঠামোয় তৈরি করা গ্লাস স্টেজ। এ স্টেজে ২৩০টি চেয়ার ছাড়াও স্টেজের সামনে ১০০টি ভিআইপি সোফা, তার পেছনে থাকবে চায়না চেয়ার। ফ্লাইং সাউন্ড সিস্টেম, ৫০টি এইচডি সিসি ক্যামেরা, অনলাইন লাইভ রেকর্ডিং করার জন্য থাকছে আরো চারটি ভিডিও ক্যামেরা। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩৫০ কেভি’র স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর। ভ্রাম্যমান আটটি টয়লেট ছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক পানির ট্রলি থাকবে। সেখানে প্রতিদিন ১০০জন শ্রমিক কাজ করছেন। অনুষ্ঠান চলাকালে ১৫০জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে। মূল স্টেজের সামনে ১২ফুট বাই ১২ফুটের আরো একটি স্টেজ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখান থেকে গাজীপুরের কৃষ্টি ও কালচার নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ’থিম সং’ পরিবেশন করা হবে এবং অতিথিদের বরণীয় গান পরিবেশন করা হবে। ইতোপূর্বে ২০০৩ সালের ২৯ জুন একই স্থলে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। ১৯ বছর পর আবার ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ১৩ বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হককে পুনরায় সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন সবুজকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে। পরে ২০১৭ সালের ২২ জুলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়। এরপর আর সম্মেলন হয়নি।
সাউন্ড ফেয়ার’র স্বত্তাধিকারী সাহানুর ইসলাম শিবলী জানান, এ সম্মেলনে নির্মিত ওয়াটার প্রুফ টেন্ট, স্টেজ, লাইটিং, লাইভকরণ ও সাউন্ড সিস্টেম, চেয়ার-সোফা সরবরাহসহ আনুসাঙ্গিক কাজের জন্য তাদের ৩৩লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মো. আতিকুর রহমান জুয়েল বলেন, এ সম্মেলন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা ও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। পথে, দোকানে চায়ের আড্ডাও সাধারণ লোকজন বলাবলি করছে গাজীপুর জেলা কমিটিতে কারা কারা আসছেন। পুরো জেলায় এখন সাজ সাজ রব চলছে। সর্বত্র নেতাদের ছবিসহ রং-বেরংয়ের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও তোরণ শোভা পাচ্ছে।
সম্মেলন ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের পছন্দের নেতাদের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড তৈরি করে সাঁটিয়েছেন জেলাজুড়ে। বিশেষ করে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর শহরের রাজবাড়ী ময়দান পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের ওপরে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু তোরণ। আর সড়কের দুই পাশে শত শত ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে পুরো শহরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, চার বছর আগে জেলা কমিটি পুনর্গঠিত হলেও দুই বছর পার হয়েছে করোনা মহামারীতে। এরপরও গ্রাম ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ। তারা আগ্রহ নিয়ে সম্মেলনের কাজ করছে। ইতোমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতির সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৯ মে’র এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি হবে তা নেতা-কর্মীদেরকে আরো ঐক্যবদ্ধ করবে এবং গতিশীল করবে। সম্মেলনের যাবতীয় খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্মেলনের সব খরচ দলীয় নেতারাই বহন করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘদিন পরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের পর এবার এটি হলো জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন। আশা করা হচ্ছে সকল নেতা-কর্মীরা এ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং এ সম্মেলন থেকে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের কী ধরনের দায়িত্ব-কর্তব্য সে সম্পর্কে তারা দিক-নির্দেশনা পাবে। এটা আমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন। তিনি বলেন, এ সম্মেলনের সকল খরচ জেলার দলীয় নেতা-কর্মীরাই যোগান দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন: