সারোগেসি সম্ভব কারণ সেখানে দরিদ্র মহিলা রয়েছে৷ ধনী ব্যক্তিরা সব সময় নিজেদের স্বার্থে সমাজে দারিদ্র্যের অস্তিত্ব চায়। আপনি যদি একটি সন্তান চান, তাহলে সারোগেসির মাধ্যমে কেন, দত্তক নিন, কোন অনাথ সন্তানকে। যে আপনার উত্তরাধিকার বহন করবে। এটি কেবল একটি স্বার্থপর দ্বিচারিতামূলক মনোভাব। সেই সঙ্গে তিনি আরও লিখেছেন, মাতৃত্বের স্বাদ একজন মায়ের পক্ষে সারোগেসির মাধ্যমে কখনই বোঝা সম্ভব নয়। কারণ সিস্টেমটাই “রেডিমেট”। —তসলিমা নাসরিন
লেখিকা তসলিমা নাসরিন |
ডেইলি নিউজ ডেস্ক
সম্প্রতি সারোগেসির মাধ্যমে মা হয়েছেন জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। যা নিয়ে চর্চা হচ্ছে। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারের প্রশংসা করেও সারোগেসি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন লেখিকা ও চিকিৎসক তসলিমা নাসরিন।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সারোগেসি বিজ্ঞানের চমৎকার একটা আবিষ্কার বটে। তবে সারোগেসি তত দিন টিকে থাকবে, যত দিন সমাজে দারিদ্র টিকে থাকবে। দারিদ্র নেই তো সারোগেসি নেই।’ এর পর তিনি লেখেন, ‘দরিদ্র মেয়েদের জরায়ু টাকার বিনিময়ে ন’মাসের জন্য ভাড়া নেয় ধনীরা। ধনী মেয়েরা কিন্তু তাদের জরায়ু কাউকে ভাড়া দেবে না। কারণ গর্ভাবস্থায় জীবনের নানা ঝুঁকি থাকে, শিশুর জন্মের সময়ও থাকে ঝুঁকি। দরিদ্র না হলে কেউ এই ঝুঁকি নেয় না।’
How do those mothers feel when they get their readymade babies through surrogacy? Do they have the same feelings for the babies like the mothers who give birth to the babies?
— taslima nasreen (@taslimanasreen) January 22, 2022
সেই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘গৃহহীন স্বজনহীন কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেয়ে সারোগেসির মাধ্যমে ধনী এবং ব্যস্ত সেলিব্রিটিরা নিজের জিনসমেত একখানা রেডিমেড শিশু চায়। মানুষের ভেতরে এই সেলফিস জিনটি, এই নার্সিসিস্টিক ইগোটি বেশ আছে। এ সবের ঊর্ধ্বে উঠতে কেউ যে পারে না তা নয়, অনেকে গর্ভবতী হতে, সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হলেও সন্তান জন্ম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।’
তসলিমা নাসরিন বর্তমান পরিস্থিতে সারোগেসিকে শোষণের প্রতীক হিসাবে তুলে ধরেছেন। তার মতে, ‘সারোগেসিকে তখন মেনে নেব যখন শুধু দরিদ্র নয়, ধনী মেয়েরাও সারোগেট মা হবে, টাকার বিনিময়ে নয়, সারোগেসিকে ভালোবেসে হবে। ঠিক যেমন বোরখাকে মেনে নেব, যখন পুরুষেরা ভালবেসে বোরখা পরবে। মেয়েদের পতিতালয়কে মেনে নেব, যখন পুরুষেরা নিজেদের পতিত-আলয় গড়ে তুলবে, মুখে মেকআপ করে রাস্তায় ত্রিভঙ্গ দাঁড়িয়ে বিষ-পঁচিশ টাকা পাওয়ার জন্য নারী-খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করবে। তা না হলে সারোগেসি, বোরখা, পতিতাবৃত্তি রয়ে যাবে নারী এবং দরিদ্রকে এক্সপ্লয়টেশনের প্রতীক হিসেবে।’
মন্তব্য করুন: