মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান |
করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
জামায়াত শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ও তাঁর পরিবার ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ থেকে মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) সন্ধ্যায় ৫০ পুরানা পল্টন ঢাকা ১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সভাপতি এডভোকেট এস কে সিকদারের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক মহাসচিব মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খানকে জামায়াত শিবিরের সংশ্লিষ্ট সহ দলীয় সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ দল থেকে বহিষ্কার করেন, যাহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়।
দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসাইন খান, সহ-সভাপতি রাশিদুল আলম তর্কবাগীশ, মহাসচিব ড. নাসির উদ্দিন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোঃ সরওয়ার হোসাইন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ ফিরোজ আলম সুমন, এম. আর. খান, উপদেষ্টা লায়ন আব্দুস সালাম চৌধুরী, হাজী সফু মিয়া সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রানা, দপ্তর সম্পাদক এ. কে আজাদ, মোখলেছুর রহমান সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায় গত বছর কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খানের বিরুদ্ধে জামায়াত শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ও তাঁর পরিবার ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গণ আজাদী লীগ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে উক্ত কমিটি সরজমিনে তদন্ত করে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেলে তাকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন এবং তাঁর সকল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষন করে গতকাল তাকে চুড়ান্ত ভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জাতীয় কালের কন্ঠ পত্রিকায় ৪ অক্টোবর ২০১৯ প্রকাশিত সংবাদটি নিম্নে দেওয়া হলো…
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বিতর্কিত আতাউল্লাহ
বিতর্কিত নেতা আতাউল্লাহ খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সফরে যাওয়ায় কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী একজন ব্যক্তি কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেলেন! পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আতাউল্লাহ খান কিভাবে ভারত সফরে গেলেন, তাঁরাও তা বুঝতে পারছেন না।
অনেকের ধারণা, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
আতাউল্লাহ খান কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের বাসিন্দা।
অভিযোগ আছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম ও ফারুক একসময় আতাউল্লাহ খানদের গ্রামের বাড়িতে আতিথেয়তা পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৌলভী মকবুল আহমদ। আতাউল্লাহ খানসহ পাঁচ ভাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তাঁরা একসময় ফ্রিডম পার্টিও করতেন। মৌলভী মকবুল আহমদ ছিলেন মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা। ১৯৭৮ সালে তিনি জামায়াতে যোগ দেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের এ রকম একজন সদস্য কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘আতাউল্লাহ খান যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন, সে বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কেউ কিছু জানতেন না। ’
আতাউল্লাহ খান ওরফে আতা খান সম্পর্কে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রাজধানীর লালবাগে একসময় তিনি ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আতাউল্লাহ খানের ভাই শফিক উল্লাহ খান মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে ফ্রিডম পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরের বছর আতাউল্লাহ খান ও তাঁর ভাই শফিক উল্লাহ খানের আমন্ত্রণে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে আসেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম এবং কর্নেল ফারুক।
মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ১৯৯৩ সালে মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিবিরের এক সভায় আতাউল্লাহ খান আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পাঞ্জেরী শিল্পগোষ্ঠীর পরিবেশনায় আতাউল্লাহ খান রচিত একটি নাটিকায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এত দিন শুনেছি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমাদের দলে অনুপ্রবেশ করেছে। আর এখন দেখি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরসঙ্গী হিসেবেই অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের আর বলার কী থাকে!’
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আতাউল্লাহ খান জামায়াত-শিবিরের শিল্পগোষ্ঠী পাঞ্জেরীর কেন্দ্রীয় পরিচালক। তিনি প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই আতাউল্লাহ খান রাতারাতি মুখোশ বদলে গায়ে মুজিব কোর্ট নিয়ে অতীতের কর্মকাণ্ড মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকায় শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৯ প্রকাশিত সংবাদটি নিম্নে দেওয়া হলো…
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসর আতাউল্লাহ খান প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বঘোষিত খুনী মেজর ডালিম ও কর্ণেল ফারুক যার গ্রামের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন সেই আতাউল্লাহ খান ওরফে আতা খান হয়েছেন ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এমন পরিবারের একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে ভারত সফরে যাওয়ার খবরে কক্সবাজারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, একাত্তরের শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের সহ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কটাক্ষ করে জামায়াত-শিবিরের পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্টি নিয়ে যে ব্যক্তি একের পর এক নাটিকা রচনা করেছেন এবার এমন স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যার সফর সঙ্গী। অথচ গতকাল বৃহষ্পতিবার সকালে ভারত রওয়ানা হওয়া পর্যন্ত সময়েও কক্সবাজারের কেউ জানতেন না এমন ঘটনাটি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী আতাউল্লাহ খান নামের ওই ব্যক্তি কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের বাসিন্দা। কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত মৌলভী মকবুল আহমদের পুত্র আতাউল্লাহ খান সহ তারা ৫ ভাই সবাই জামায়াত-শিবির ও ফ্রিডম পার্টির সক্রিয় নেতা-কর্মী। প্রয়াত মৌলভী মকবুল আহমদ ছিলেন মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা এবং ১৯৭৮ সালে তিনি জামায়াতে যোগ দেন। গতকাল দিনব্যাপি পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে-খান পরিবারের পুরোটাই বর্তমান সরকার বিরোধী একটি চক্র।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন-‘ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের এরকম একজন সন্তান কিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারতে সফরসঙ্গী হলেন তা নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।’ এমনকি সেই আতাউল্লাহ খানের পরিবারের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হওয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা গতকাল বৃহষ্পতিবার এমন খবর শুনে হতবাক হয়ে পড়েছেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপেরই একজন বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে ভারত সফরের বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কেউই কিছু জানতেন না। গতকাল ভোরে তিনি খবরটি পেয়ে মহেশখালী দ্বীপের এই বাসিন্দার খবরা-খবর নিতে গিয়ে জানতে পারেন পুরো পরিবারটিই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। এমনকি আতাউল্লাহ খান নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য আতা খান হিসাবেও পরিচিত হন।
সেই আতাউল্লাহ খান ওরফে আতা খান সম্পর্কে গোপন খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, রাজধানী ঢাকার লালবাগে তিনি শিবিরের দায়িত্ব নিয়েও কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে আতাউল্লাহ খানের ভাই মৌলভী শফিক উল্লাহ খান মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে ফ্রিডম পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এই শফিক উল্লাহ খান এক সময় মহেশখালী দ্বীপে সাংবাদিকতার নামে অনেক অপকর্ম করেও বেড়িয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পরের বছর বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম এবং কর্ণেল ফারুক আতাউল্লাহ খান ও তার ভাই শফিকুল্লাহ খানের আমস্ত্রণে মহেশখালী দ্বীপে তাদের গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।
খান বাড়িতে বসেই কক্সবাজার ও মহেশখালীতে দলের কমিটিও গঠণ করেছিলেন। প্রয়াত মৌলভী মকবুল আহমদ নামের শেষে খান লিখতেন না। অথচ তারই ৫ সন্তান সবাই নামে খান জুড়িয়ে দিয়েছেন। খান বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পদার্পনের পর থেকেই ওরা ৫ ভাইয়ের দাপটে দ্বীপবাসীর হয়েছিল ত্রাহি অবস্থা। মৌলভী শফিক উল্লাহ খান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হয়ে ১৯৯৬ সালে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে সাংসদ প্রার্থী হতে পারায় তার দাপটেরও যেন কোন সীমা ছিলনা।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর গতকাল সারাদিন আতাউল্লাহ খানের খোঁজ খবর নিয়ে জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালে মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিবিরের এক সভায় আতাউল্লাহ খান আওয়ামী লীগ ও জাতির জনক সর্ম্পকে আপত্তিকর বক্তব্য রেখেছিলেন। এছাড়াও আতাউল্লাহ খান রচিত পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠির পরিবেশনায় অনুষ্টানে মঞ্চস্থ করা একটি নাটিকায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের নিয়ে কটুক্তি করা হয়।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিক দল আজাদী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন বলে বলা হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারে এ ব্যক্তির পরিচয় রয়েছে ভিন্নরুপে। মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন-‘ এতদিন শুনে আসছি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আমাদের দলে অনুপ্রবেশ করেছে। আর এখন দেখি ফ্রিডম পার্টি এবং জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারগণ খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরসঙ্গী হিসাবেই অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের আর বলার কি থাকে ?’
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন- ‘আতাউল্লাহ খান জামায়াত-শিবিরের শিল্পী গোষ্ঠি পাঞ্জেরীর কেন্দ্রীয় পরিচালক। তিনি প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রটনা চালিয়েই কাজ করেন।’ এমপি আশেক উল্লাহ রফিক আরো বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই আতাউল্লাহ খান রাতারাতি তার মুখোশ বদলে গায়ে মুজিব কোর্ট নিয়ে অতীতের কর্মকান্ড মুছে ফেলার কাজে রয়েছেন।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়া সাবেক শিবির ক্যাডার আতাউল্লাহ খান, তার ভাই ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার শফিকুল্লাহ খান, স্থানীয় জামায়াত নেতা শাকের উল্লাহ খান, নাছেরুল্লাহ খান ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং জামায়াত নেতা বোরহান উদ্দিন খানের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা দ্বীপের বাসিন্দারা এখনও ভুলেননি। ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার মৌলভী শফিক উল্লাহ খান বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার পাশা চৌধুরী ও এনামুল করিমকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এই দুই নেতা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।
আতাউল্লাহ ওরফে আতা খান ১৯৮৬-৮৭ সালে মহেশখালী আদর্শ স্কুলে পড়াকালীন সময়ে শিবিরের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনে লিবারেল পার্টির প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচনও করেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের সকল ভাই দ্বীপ থেকে পালিয়ে পরিচয় গোপন করে ঢাকা-চট্টগ্রামে অবস্থান নিয়ে নানা ভাবে সরকারে অনুপ্রবেশ করে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। তাদের দুই ভাই পাকিস্তানেও পালিয়েছিলেন। আতাউল্লাহ গনআজাদী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এখন অনেক টাকা-পয়সার মালিক। তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বার সহ বিশিস্ট ব্যক্তিদের পদক দেয়ার ‘কারবারেও’ জড়িত বলে জানা গেছে।
পূর্বপশ্চিম পত্রিকায় শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৯ প্রকাশিত সংবাদটি নিম্নে দেওয়া হলো…
বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম-ফারুকের ঘণিষ্ঠ আতাউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে ভারতে
কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের বাসিন্দা আতাউল্লাহ খান ছাত্রজীবনে প্রথমে ফ্রিডম পার্টি করতেন, পরে ঢাকায় গিয়ে শিবিরের নেতা বনে যান। তার বাবা মৌলভী মকবুল আহমদ মুসলিম লীগ করতেন। ভাইয়েরা জড়িত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম ও ফারুক মহেশখালীতে এসে একাধিকবার তাদের গ্রামের বাড়িতে আতিথেয়তা নেন।বরাবরই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির পৃষ্ঠপোষক এই পরিবারটির সদস্য হয়ে আতাউল্লাহ খান ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
বিতর্কিত নেতা আতাউল্লাহ খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সফরে যাওয়ায় কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী একজন ব্যক্তি কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেলেন! কোন ক্যাটগরিতে আর কিভাবে আতাউল্লাহ খান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সফরে গেলেন, তা কেউই বলতে পারছে না।
একসময় ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে জড়িত থাকা আতাউল্লাহ এখন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অনেকের ধারণা, আ’লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের এ রকম একজন সদস্য কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, এত দিন শুনেছি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমাদের দলে অনুপ্রবেশ করেছে। আর এখন দেখি ফ্রিডম-জামায়াতের ক্যাডাররা বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরসঙ্গী হিসেবেই অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের দুঃখ পাওয়া ছাড়া, আর বলার কী থাকে!
এলাকাবাসী জানায়, আশির দশকের মাঝামাঝিতে আতাউল্লাহ খানকে অল্পবয়সে স্থানীয়ভাবে ফ্রিডম পার্টির মিছিল মিটিংয়ে দেখা যেত।১৯৯৬ সালে আতাউল্লাহ র ভাই শফিক উল্লাহ খান মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে ফ্রিডম পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার হয়ে কুড়াল মার্কার প্রচারণা করেছেন আতাউল্লাহ। নব্বুই পরবর্তী তাদের গ্রামের বাড়িতে একাধিবার বেড়াতে আসেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম এবং কর্নেল ফারুক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে রাজধানীর লালবাগে চলে যান এবং ছাত্রশিবিরের নেতা বনে যান।
মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ১৯৯৩ সালে মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিবিরের এক সভায় আতাউল্লাহ খান আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পাঞ্জেরী শিল্পগোষ্ঠীর পরিবেশনায় আতাউল্লাহ খান রচিত একটি নাটিকায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার হিসেবে তাদের পরিবার এলাকায় পরিচিত। সেই পরিবারের সদস্য আতাউল্লাহ খান যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন, সে বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কেউ কিছু জানতো না।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ দাবি করেন, জামায়াত-শিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঞ্জেরী শিল্পগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় পরিচালক ছিলেন আতাউল্লাহ খান । তিনি বলেন, এই আতাউল্লাহ খান প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। সে কিভাবে ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ার সুযোগ পেল, তা আমাদের বোধগম্য নয়। দলীয়ভাবে বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কে এই বহুরূপীকে মুখোশ পাল্টানোর সুযোগ করে দিল, তাকে আগে খুজে বের করতে চাই।
মন্তব্য করুন: