
করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তার অনুসারী ১১৯ নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্যাহ মন্ডল স্বাক্ষরিত নোটিশে আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে ১৯ জন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। বাকিরা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটিতে থাকা নেতাকর্মী।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরও দলীয় কিছু নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ও গোপনে তার সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গত ৫ ডিসেম্বর এদের বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্টে যাদের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্যাহ ম-লের নিকট লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে যাদের নোটিশ দেওয়া হয় তারা হলেন- গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, সহ-সভাপতি ও গাজীপুর আদালতের জিপি আমজাদ হোসেন বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকছেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং সিটি কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ, সদস্য রজব আলী, হাজী আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হবে। এই হিসাবে আগামী বছর মে অথবা জুন মাসের মধ্যেই গাজীপুর সিটির নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করার আগেই ১১৯ নেতাকর্মীকে শোকজ দেওয়ায় নগরজুড়ে রয়েছে আলোচনা। এর মাধ্যমে স্পষ্টত জাহাঙ্গীরপন্থি ও জাহাঙ্গীরবিরোধী দুটি বলয় তৈরি হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হওয়ার পর তার সঙ্গে যারা বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান আলীকে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১১৯ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা বলেন, শুনেছি শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করার জন্য শোকজ পাঠানো শুরু হয়েছে। সামনে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সিটি নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। এ সময়ে তুচ্ছ অজুহাতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েক দিন পর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সরকার ও দল এ ব্যবস্থা নেয়।
মন্তব্য করুন: